মাছ খেতে গিয়ে গলায় কাঁটা আটকানোর অভিজ্ঞতা কমবেশি অনেকেরই আছে। মাছে–ভাতে বাঙালি বলে কথা। খেতে বসে গলায় যদি মাছের কাঁটা আটকায়, কী করবেন, কী করবেন না
ছোট বা বড় মাছের কাঁটা সাধারণত গলার মধ্যে, জিবের গোড়ায় ও গলবিলে (ফ্যারিংস) আটকায়। আধা সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁটা আটকাতে দেখা যায় বেশি। তবে এ ক্ষেত্রে ছোট কাঁটা আটকানোর হার বেশি। সাধারণত রুই, ছোট পোনা মাছ, ভেটকি, ইলিশ, তেলাপিয়া, ছোট পুঁটি, টাকি, গুলশা—এসব মাছে এ ধরনের কাঁটা বেশি থাকে।
কত দিন পর্যন্ত আটকে থাকতে পারে
এখন পর্যন্ত ৯ মাস গলায় কাঁটা আটকে থাকার ইতিহাস আছে। দীর্ঘ ৯ মাস পর ভুক্তভোগীর ঘাড়ে ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রথম কাঁটা খুঁজে পাওয়া যায়।
কাদের বেশি আটকায়
ছেলেমেয়ে, ছোট–বড়, বয়স্ক—সবার গলাতেই আটকাতে পারে কাঁটা। তবে ২১-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এটি ঘটতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কারণ, তাঁরা পড়াশোনা, কাজ বা ক্যারিয়ার–সংক্রান্ত ব্যস্ততায় অমনোযোগী হয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করতে চান। প্রখ্যাত গবেষণা সংস্থা ‘উইলি’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন’ একটা তালিকায় আছে:
শিশু
বয়স্ক
যাঁরা নকল দাঁত ব্যবহার করেন
যাঁরা ‘সেরেব্রাল পালসি’র রোগী
যাঁদের ‘মাসকুলার ডিস্ট্রফি’ বা মাংসপেশি নষ্ট হয়ে যাওয়া রোগ আছে
যাঁরা একবারে অনেক খাবার খান
যাঁরা তাড়াতাড়ি খাবার খান
গলায় মাছের কাঁটা আটকে গেলে প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর ও জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলো হলো:
সাদা ভাত গিলে ফেলা
মাছের কাঁটা গলা থেকে নামানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত পদ্ধতি। খেতে খেতেই যেহেতু গলায় কাঁটা আটকায় আর হাতের কাছেই থাকে ভাত, তাই এ পদ্ধতিই কাজে লাগানো হয় বেশি। সাধারণত দু–তিনবারেই কাঁটা নেমে যায়। যদি না নামে, তাহলে অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে খেয়েও চেষ্টা করা যায়।
পাকা কলা খাওয়া
পাকা কলা বেশ পিচ্ছিল, পাওয়া ও খাওয়াও খুব সহজ; তাই গলার কাঁটা দূর করতে এটিও বেশ প্রচলিত।
জোরে কাশি দেওয়া
জিবের পেছন দিকে যদি কাঁটা আটকে থাকে, তাহলে কয়েকবার জোরে কাশি দিলেও সাধারণত বের হয়ে আসে।
অলিভ অয়েল খাওয়া
অলিভ অয়েল অন্যান্য তেলের চেয়ে পিচ্ছিল হওয়ায় গলার ভেতরের অংশ আরও পিচ্ছিল বানিয়ে কাঁটা নেমে যেতে সাহায্য করে।
ভিনেগার বা লেবু খাওয়া
ভিনেগার বা লেবুর রস অ্যাসিডিক বলে গলার ভেতরের কাঁটাকে নরম করে নিচে নামিয়ে দেয়। তবে ভিনেগার খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন বেশি খাওয়া হয়ে না যায়। তাতে ভালোর পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা বেশি।
লবণপানির গড়গড়া
হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলার মাংসপেশিগুলো রিলাক্স হয়ে কাঁটাকে আলগা করে দিতে পারে।
ক্র্যাকার্স বা চিপস খাওয়া
অনেক সময় অনেক চিপস একসঙ্গে খেলেও এগুলোর সঙ্গে কাঁটাও নিচে নেমে যেতে পারে।
১. গলার ভেতরে বেশি হাতানো যাবে না।
২. গলার মুভমেন্ট যতখানি সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে কাঁটা বের না করা পর্যন্ত।
৩. এ–সংক্রান্ত কুসংস্কার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে; যেমন বিড়ালের পা ধরে মাফ চাওয়া। এভাবে সমস্যা তো মিটবেই না, উল্টো বিড়ালের পা ধরতে গিয়ে খামচি খেয়ে নতুন বিপদ ডেকে আনার আশঙ্কা।
৪. কবিরাজ, ঝাড়ফুঁকওয়ালার কাছে গিয়েও বিপদ বাড়ানো যাবে না।
ঘরোয়া টোটকা চিকিৎসা নেওয়ার পরও যদি মনে হয়, কাঁটা যায়নি, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। রাতে কাঁটা বিঁধলে সকাল হোক এরপর যাব, এমন মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
বিশেষ করে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
১. খুব বেশি ব্যথা হলে
২. গলা দিয়ে বেশি বেশি রক্ত এলে
৩. কাঁটা লাগা অংশ ফুলে গেলে
৪. বেশি লালারস ঝরতে থাকলে
৫. শ্বাসকষ্ট শুরু হলে
৬. বুকে ব্যথা শুরু হলে
৭. খাবার বা পানি গিলতে কষ্ট হলে বা না পারলে।
ডা. হিমেল কুমার বিশ্বাস, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা