ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার শুরু করা হয়। এ নিয়ে অভিভাবকদের ভেতর থাকে উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা। শিশুর প্রথম খাবার কী হতে পারে, তা অনেকেই জানেন। তবে কোন খাবারগুলো শিশুকে খাওয়ালে আছে বিপদের সমূহ আশঙ্কা, সেগুলোও এবার জেনে নিন। এ তালিকায় কিছু খাবারের নাম দেখে আপনি অবাক হবেন। তালিকার ১ থেকে ৫ নম্বর খাবারগুলো শিশুর বয়স ১২ মাস বা ১ বছর না হওয়া পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে না। ৬ থেকে ৮ নম্বর খাবারগুলো ৪ বছর পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে না। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের পরামর্শ অনুসারে দেখে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো খাওয়ানো যাবে না আর কোন কোন খাবারের ক্ষেত্রে অবলম্বন করতে হবে বিশেষ সতর্কতা।
১. মধু
আমাদের সমাজে শিশুর জন্মের পরপরই তার মুখে মধু দেওয়ার রীতি আছে। তবে সত্যিটা হলো এটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, কাঁচা (র) মধুতে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনামের স্পোর থাকতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া পেটে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। কেননা, এক বছর পর্যন্ত শিশুর পাকস্থলী এটা পরিপাক করতে পারে না। তবে এক বছরের পর শিশুকে মধু দেওয়া যাবে। তত দিনে শিশুর পাকস্থলী মধুর এই স্পোর হজম করার জন্য পরিণত হয়ে যায়।
২. ‘আধ সেদ্ধ’ ডিম
শুরুতেই শিশুকে ‘হাফ বয়েলড’ বা ‘আন্ডারকুকড’ ডিম দেবেন না। এর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া পেটে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ফিভার, গ্যাস্ট্রোএন্টারটাইটিস, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া এতে বমি, খাবারে অরুচি, ক্ষুধামান্দ্য, ডিম খেতে না চাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. ফলের জুস
ফলের জুস ফলের মতো পুষ্টিকর নয়। শিশুকে ফলের জুস যত কম খাওয়াবেন, ততই ভালো। কেননা ফলের জুস খাওয়ালে প্রথমত, অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা কম থাকবে, খেতে চাইবে না। দ্বিতীয়ত, ফলের জুস শিশুর দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। আর তৃতীয়ত, ফলের জুসের অ্যাসিটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পেটের নানা ধরনের সমস্যা আর অস্বস্তি হতে পারে।
৪. গরুর দুধ
গরুর দুধ কখনো বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধের বিকল্প নয়। আপনি যদি গরুর দুধ দিয়ে শিশুকে দই, পুডিং, কাস্টার্ড ইত্যাদি বানিয়ে খাওয়ান, সেটা ঠিক আছে। তবে দুধের উৎস হিসেবে গরুর দুধ না দিলেই ভালো। কেননা গরুর দুধে প্রচুর সোডিয়াম বা লবণ থাকে। এটা শিশুর কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। আবার গরুর দুধে অন্যান্য দুধের তুলনায় আয়রনও থাকে অনেক কম। ফলে যথেষ্ট পুষ্টিকর নয়।
৫. মাছ
মাছ প্রোটিনের খুবই ভালো উৎস। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ, তৈলাক্ত মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যেটা স্নায়ুর গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব মাছেই প্রচুর মার্কারি থাকে, যেটা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। আবার মাছের কাঁটা আটকে গলায় বিঁধেও ঘটতে পারে বিপদ। তাই সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয় হবে।
৬. বেশি লবণ দেওয়া খাবার
যেসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয়, সেগুলো শিশুকে খাওয়াবেন না। শিশুর খাবারে আলাদা করে লবণ (অ্যাডেড সল্ট) দেওয়া থেকেও বিরত থাকুন। বিশেষ করে কেনা চিপসে প্রচুর লবণ থাকে।
৭. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার
শিশুকে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার দেবেন না। ছোটবেলা থেকেই শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠার পথে এটা একটা বাধা। তা ছাড়া দাঁত, পেট তথা শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। চকলেট, ক্যান্ডি, হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো খাবারগুলো ‘গিল্টি প্লেজার’ হিসেবে সপ্তাহে একবার দিতে পারেন।
৮. কাঁচা আপেল, গাজর, পপকর্ন, হটডগ
এই খাবারগুলোর মতো শক্ত আবার পিচ্ছিল খাবার সহজেই শিশুর শ্বাসনালিতে আটকে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই এগুলো সেদ্ধ করে, ম্যাশ করে দিতে পারেন। হটডগ ছোট ছোট করে কেটে দিতে পারেন। পপকর্ন চার বছর পর্যন্ত না দেওয়াই ভালো।
সূত্র: আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস