মনের কথা কার কাছে বলবেন

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, নাকি চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী—মনের রোগে কার কাছে যাওয়া উচিত? এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। এমনকি মনের রোগে চিকিৎসা নেবেন কি নেবেন না, তা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন অনেকে। এর সমাধান কী?

মনের রোগে চিকিৎসা নেবেন কি নেবেন না, তা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন অনেকে
ছবি : সুৃমন ইউসুফ

মনের রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ যেমন প্রয়োজন হতে পারে, তেমনি কাউন্সেলিংও চিকিৎসার একটি বড় অংশ। কারও ক্ষেত্রে যেকোনো একটিতেই কাজ হয়, কারও প্রয়োজন হয় উভয় ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা। রোগনির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসাপদ্ধতি, অর্থাৎ চিকিৎসার সামগ্রিক পরিকল্পনা করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ‘তবে অনেক রোগীর চিকিৎসা সম্পন্ন করার জন্যই তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানী—উভয়েরই প্রয়োজন হয়,’ এমনটাই বলছিলেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।

এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিলেন রশিদুল হক। মানসিক সমস্যায় এমন অনেক উপসর্গ দেখা দেয়, যেসব কারও কারও ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার জন্য না হয়ে কোনো শারীরিক সমস্যার জন্য হয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ একই ধরনের উপসর্গের পেছনে থাকতে পারে নানান কারণ। মানবদেহের জটিল ক্রিয়া-বিক্রিয়ার কার্যকারণ ও গতিপ্রকৃতি বুঝে সঠিক রোগনির্ণয় করা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষেই সঠিকভাবে সম্ভব। তা ছাড়া কোন ওষুধ কার জন্য প্রযোজ্য, কোনটি দিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটিও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই জানেন। রোগনির্ণয়ের পর রোগীর কাউন্সেলিং কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে তিনিই মনোবিদের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন জানালেন, রোগীকে তাঁর নিজের শক্তিতে উদ্দীপিত করেন তাঁরা। সরাসরি পরামর্শভিত্তিক কাজ নয়; বরং রোগীকে একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই প্রয়োজন মনোবিজ্ঞানীর। তা ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসক মানসিক রোগটি নির্ণয় করার পর সমস্যার মাত্রা নির্ণয়ের জন্যও মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। মনোবিজ্ঞানী, অর্থাৎ মনোবিদের কাজের মধ্যেও নানান ভাগ থাকে।

বিষণ্ণতা, হতাশা, দুশ্চিন্তা, সামান্য বিষয়ে বা অকারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া, বুক ধড়ফড় করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা—মানসিক সমস্যায় ভুগলে এমন নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও হয় ক্ষুধামান্দ্য, কেউ আবার বেশি বেশি খান। কারও কারও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। উপসর্গ যেটি হোক, যেকোনো মানসিক সমস্যার জন্য প্রথমে আপনাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এরপর মনোবিদের কাছে আপনাকে যেতে হবে কি না সেটি আপনাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলে দেবেন।

এখনো আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ পেলে লোকে পাগল ভাববে কি না, সে ভাবনাতেই চিকিৎসা নিতে পিছপা হন অনেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মনের রোগের কারণে জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। মানসিক সমস্যার প্রভাব পড়তে পারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, এমনকি সামাজিক জীবনেও। এতে পেশাগত জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মানসিক সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করলে অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও সৃষ্টি হয়। তাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সামাজিক বলয় পেরিয়ে নিজের সুস্থতার জন্যই মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন। আপনজনদের মধ্যে মানসিক রোগের উপসর্গ কিংবা আচরণের পরিবর্তন লক্ষ করলে তাঁরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলেই জানালেন হাজেরা খাতুন।