গিরায় সংক্রমণ বা সেপটিক আর্থ্রাইটিস একটি সংক্রমণজনিত রোগ, যা দ্রুত শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা না করালে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি নবজাতক থেকে শুরু করে কিশোর বয়সীদের হতে পারে। তবে সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের হয়ে থাকে রোগটি।
বিভিন্ন ধরনের জীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। ছেলে শিশুদের গিরায় সংক্রমণ মেয়ে শিশুদের তুলনায় বেশি হয়। আবার বড়দের তুলনায় শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।
রোগটি সাধারণত একটি গিরাতেই প্রকাশ পায়। তবে নবজাতকের ক্ষেত্রে একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি গিরা আক্রান্ত হতে পারে। ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে পায়ের গিরাগুলোয় যেমন হাঁটু, গোড়ালি, নিতম্বে বেশি হয়। তবে হাতের গিরা, যেমন কবজি, কাঁধও আক্রান্ত হতে পারে।
সচেতনতা, দ্রুত শনাক্তকরণ ও যথাযথ চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।
কারণ
রক্তে বিদ্যমান জীবাণু গিরায় প্রবেশ করা।
হাড়ে বিদ্যমান সংক্রমণ গিরায় প্রবেশ করা।
কোনো আঘাত বা হাড়ভাঙা থেকেও এ রোগ হতে পারে।
সংক্রমণজনিত চামড়ার ক্ষত থেকে হতে পারে।
শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল থাকলে।
লক্ষণ
গিরায় প্রচণ্ড ব্যথা। শিশু সংশ্লিষ্ট গিরা ধরতেও দিতে চায় না। খুঁড়িয়ে হাঁটে বা হাঁটতে চায় না।
আক্রান্ত গিরা ফুলে লাল হয়ে যায়, গিরার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। জ্বর আসে।
নবজাতকের ক্ষেত্রে অনেক সময় এসব লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। তবে দেখা যায়, নবজাতক আক্রান্ত হলে হাত বা পায়ের নড়াচড়া কমে যায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রক্তের পরীক্ষা, যেমন রক্তকণিকার পরিমাণ, ইএসআর, সিআরপি, রক্তের কালচার পরীক্ষা করে এ রোগের ধারণা পাওয়া যায়।
গিরায় পানি থাকলে সেই পানি নিয়ে পরীক্ষা করলেও এ রোগ শনাক্ত করা যায়।
এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড করেও শনাক্ত করা যায় রোগটি।
চিকিৎসা
চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক দুই থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া হয়।
প্রথম দুই সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক শিরাপথে প্রয়োগ করতে হয়, পরে মুখে দেওয়া যায়।
কখনো নিতম্ব ও কাঁধের গিরা আক্রান্ত হলে গিরায় অস্ত্রোপচার করে পুঁজ বের করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্প্লিন্ট ব্যবহার করেও চিকিৎসা করা হয়।
জটিলতা
সঠিক সময় চিকিৎসা না করালে আক্রান্ত গিরার কার্যক্ষমতা কমে যায়। শিশুর পা ছোট-বড় হতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্র ও হাড়ের সংক্রমণ, সেলুলাইটিস, নিউমোনিয়া হতে পারে।
গিরায় সংক্রমণ অনেক সময় লক্ষণবিহীন থাকতে পারে; আবার অন্য অনেক রোগের মতো মনে হতে পারে। তাই সঠিকভাবে রোগ শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ রোগের প্রতিরোধমূলক তেমন ব্যবস্থা নেই। সচেতনতা, দ্রুত শনাক্তকরণ ও যথাযথ চিকিৎসায় এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।
ডা. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বিএসএমএমইউ