শীতের সন্ধ্যায় রাস্তার পাশের ভুট্টাপোড়ায় কি আলাদা কিছু থাকে? অন্য রকম মজা না? সিনেমার পর্দায় চোখ রেখে আনমনে পপকর্ন পেটে চালান করে দেওয়াও অনেকের প্রিয়। জনপ্রিয় এই ভুট্টা আপনাকে কী ধরনের পুষ্টি দিচ্ছে, জানেন?
ভুট্টা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আছে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ। একটা মাঝারি আকারের (১০০ গ্রাম) ভুট্টায় থাকে ৮৭.৭ ক্যালরি এনার্জি, ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন, ১.৪ গ্রাম ফ্যাট ও ১৯.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এ ছাড়া এতে ২ গ্রাম আঁশ ও ১৫.৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। ভুট্টার পুষ্টিগুণ হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। জেনে নিন ভুট্টার আরও কিছু গুণ।
১. হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে
ভুট্টায় প্রচুর অদ্রবণীয় আঁশ আছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং হজমপ্রক্রিয়া করে উন্নত। এই আঁশ মলের পরিমাণ বাড়িয়ে বর্জ্য দ্রুত শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ভুট্টার আঁশ ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ভুট্টা খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেট ভরা লাগে।
২. হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখে
ভুট্টার পটাশিয়াম ও ক্যারোটিনয়েড হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃৎপিণ্ডের কাজকর্ম ঠিক রাখে।
৩. পেট ভালো রাখে
ভুট্টার আঁশ অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হজমপ্রক্রিয়া সঠিক রাখতে সহায়ক।
৪. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
ভুট্টার আঁশ স্টার্চকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া ধীরগতির করে দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহযোগিতা করে। এ কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভুট্টা উপকারী।
৫. চোখ ভালো রাখে
ভুট্টায় লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন নামের ক্যারোটিনয়েড থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং চোখের ছানি ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমায়। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হলো চোখের ম্যাকুলা অংশের একটি বয়সজনিত রোগ, যা কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে। ভিটামিন এ-র জন্য প্রয়োজনীয় এসব উপাদান চোখের কর্নিয়া ও রেটিনার সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়ক।
৬. দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ করে
হোল গ্রেইন বা পূর্ণাঙ্গ শস্য হিসেবে ভুট্টা হৃদ্রোগ, কোলন ক্যানসার, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। ভুট্টার আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদান দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
৭. সুরক্ষামূলক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর
ভুট্টার প্রধান রঞ্জক লুটিন ও জিয়াজ্যানথিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা চোখের সুরক্ষা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্যারোটিনয়েডগুলো চোখের বিভিন্ন ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ভুট্টায় আছে কোয়ারসেটিন। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কোয়ারসেটিন শরীরে প্রদাহ কমায়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও অ্যালঝেইমার্স ডিজিজের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সাবধানতা
ভুট্টা খাওয়ার পর অনেকের অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: হেলথ ডটকম