এম্পটি ক্যালরি শুনলে মনে হয়, এটি এমন একধরনের খাবার, যাতে কোনো ক্যালরি নেই। আসলে যেকোনো খাবারে ক্যালরি থাকে।
যেসব খাবারের পুষ্টিগুণ কম কিন্তু উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, সেগুলো এম্পটি ক্যালরি নামে পরিচিত। এগুলো এমন খাবার ও পানীয়; যাতে চিনি, চর্বি বা অ্যালকোহলের পরিমাণ বেশি থাকে।
আমরা জানি, কার্বোহাইড্রেট প্রতি গ্রামে ৪ ক্যালরি, প্রোটিন ও চর্বি প্রতি গ্রামে ৯ ক্যালরি এবং অ্যালকোহল প্রতি গ্রামে ৭ ক্যালরি থাকে। ক্যালরি শক্তির বাইরেও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজ করে। চর্বিহীন মাংস ও মাছ প্রোটিনের বড় উৎস। এগুলো শরীরের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ।
সবজিতে প্রাপ্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (ভিটামিন ও খনিজ) ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আবার ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা এবং স্বাভাবিক মলত্যাগে সহায়তা করে। এম্পটি ক্যালরি তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করলেও ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি ও ভিটামিন শোষণ করতে পারে না।
এম্পটি ক্যালরি থাকে এমন খাবার ও পানীয়—
কোমল পানীয়, স্পোর্টস ড্রিংক, মিষ্টি চা, লেমোনেড ও এনার্জি ড্রিংক, ফলের রসসহ চিনিযুক্ত পানীয়।
জাঙ্ক ফুড ও ফাস্ট ফুড। কার্বোহাইড্রেটভিত্তিক ডেজার্ট যেমন কেক, বিস্কুট, ডোনাট, মাফিন ও গ্রানোলা বার। ক্যানডি বার ও হার্ড ক্যানডি।
বেকন, সসেজ ও হটডগসহ কিছু মাংস।
পূর্ণ চর্বিযুক্ত পণ্য যেমন মাখন ও আইসক্রিম। কেচাপ ও বারবিকিউ সস। অ্যালকোহল।
অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারে এম্পটি ক্যালরি পাওয়া যায়। খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান চর্বি, চিনি, সোডিয়াম ও কার্বোহাইড্রেটের নির্দিষ্ট সংমিশ্রণ যেমন আলু চিপস ক্রেভিং বৃদ্ধি করে। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ প্রতিদিন গড়ে ৯২৩ ও নারী ৬২৪ এম্পটি ক্যালরি গ্রহণ করেন। আমরা প্রায় সময় না জেনে অতিরিক্ত এম্পটি ক্যালরি গ্রহণ করি।
শিশুরা এম্পটি ক্যালরি গ্রহণের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। অনেক খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য উচ্চ ক্যালরির পণ্য বাজারজাত করে।
এম্পটি ক্যালরিযুক্ত খাবার দ্রুত হজম হওয়ায় তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগে। এতে রক্তে শর্করার স্পাইক হতে পারে এবং প্রদাহ বাড়তে পারে। এতে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
এম্পটি ক্যালরির বিকল্প হতে পারে—
সোডা, ফলের রস, স্পোর্টস ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংকের পরিবর্তে কালো কফি, ভেষজ চা, লেবুর শরবত, ডাবের পানি পান।
স্ন্যাক্সের সময় কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া।
ফলের রসের পরিবর্তে তাজা ফল খাওয়া।
ফ্রায়েড চিকেনের পরিবর্তে বেকড চিকেন খাওয়া।
প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার আগে পুষ্টি লেবেল পড়ার অভ্যাস করা। এতে ক্যালরি, চর্বি ও চিনির পরিমাণ দেওয়া থাকে।
অ্যালকোহল পান সীমিত করা। কারণ, প্রতি গ্রাম অ্যালকোহলে সাতটি ক্যালরি থাকে।
নাজনীন এস মৌসুমী, পুষ্টিবিদ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা