সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচটি শাকসবজি ও দুটি ফল গ্রহণ করলেই যথেষ্ট। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ রকমের সবজি ও ফল খাওয়ার পরামর্শ দেয়। কেননা নিয়মিত এ ধরনের সবজি খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা কমে যায় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া সবজি খেলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে। অন্ত্রের সমস্যাগুলো উপশম করে। হজমে শক্তি বৃদ্ধি করে।
এসব কারণে আজকাল অনেকেই শুধু উদ্ভিজ্জ খাবার খাচ্ছেন। শুধু এ ধরনের খাবার খেলে আপনার শরীরে পাশাপাশি আরও কী ঘটছে, সে বিষয়ে জানা থাকা দরকার।
শক্তি উৎপাদন হার কমে যায় এবং ওজন হ্রাস পায়
যখন আমরা আমিষভোজী থেকে নিরামিষভোজী হয়ে যাই তখন শরীর ক্যালরি সমস্যায় পড়ে। কারণ, প্রাণিজজাতীয় খাদ্যের চেয়ে উদ্ভিদজাতীয় খাদ্যে ক্যালরির ঘনত্ব কম। ফলে মারাত্মকভাবে ওজন হ্রাস পায়। সবজি খেলেন আর কোনো শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করলেন না, তাতে শরীরের উপস্থিত গ্লাইকোজেন ভেঙে যায় এবং গ্লুকোজ তৈরি হতে শুরু করে, যা আমাদের শক্তির জোগান দেয়। ফলে শক্তি কমে যায় এবং বেশি বেশি ক্লান্তি লাগে।
‘লিকি গাট’ সমস্যা
প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডালজাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করতে হয়। কারণ, উদ্ভিজ্জ আমিষের মধ্যে ডালে আমিষ বেশি। ডালে ফাইটেট ও লেকটিন নামক উপাদান রয়েছে, যা পুষ্টি শোষণ ব্যাহত করে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা ও অন্ত্রের সমস্যা করে।
হরমোনের ব্যাঘাত
প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে নিরামিষাশীরা সয়া খান। কখনো দুধ আবার কখনো টফু হিসেবে। এতে প্রচুর ফাইটোস্ট্রোজেন রয়েছে, যা হরমোনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি প্রাণিজ প্রোটিন না থাকায় ত্বক, চুলপড়া, অনিয়মিত মাসিকের চক্র, বিবর্ণ চামড়াসহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
আয়রনের ঘাটতি
উদ্ভিজ্জ খাদ্যে আয়রন আছে, তবে তা শরীরে ঠিকভাবে শোষিত হয় না। তাই নিরামিষাশীরা আয়রন ঘাটতিতে পড়েন। যার দরুন অবসাদ ও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
ভিটামিন বি ১২-এর অভাব
বি ১২ খুবই অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন। এর অভাবে শরীরে অনেক অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত এটি প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া যায়।
বিষণ্নতা বৃদ্ধি
নিরামিষাশীরা যেহেতু মাছ ও মাছের তেল গ্রহণ করেন না, তাই তাঁদের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি দেখা যায়। যা থেকে বিষণ্নতা বাড়তে পারে।
খাবার গ্রহণে অনীহা বৃদ্ধি
দেখা দিতে পারে অ্যানোরেক্সিয়া। এই মানসিক ব্যাধি হলে খাবারে অনীহা দেখা দেয়, কমে যায় ক্ষুধা।
দুর্বল হাড়
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
এগুলো ছাড়াও প্রয়োজনের বেশি শাকসবজি খেলে হজমজনিত সমস্যা, যেমন গ্যাস, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হতে পারে। শরীরে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ছয় শ্রেণির খাবারেরই প্রয়োজন। একশ্রেণির খাবার বাকিদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে একটি সুষম খাদ্য অত্যন্ত বাঞ্ছনীয় এবং প্রয়োজনীয়।
সাজিয়া মাহমুদ, কনসালট্যান্ট পুষ্টিবিদ, প্যানকেয়ার হাসপাতাল।