ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি কেন এত জনপ্রিয়

পিত্তথলির পাথর অপসারণে ল্যাপারেস্কপি সার্জারি সবচেয়ে জনপ্রিয়
ছবি: সংগৃহীত

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বা পেট ফুটো করে অস্ত্রোপচার সার্জারি জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও এ সার্জারি পদ্ধতি বর্তমানে নানা ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে।

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি কী?

ল্যাপারো শব্দটি এসেছে ল্যাপার বা পেট থেকে। আর স্কোপ মানে বীক্ষণ বা দেখা। পেট না কেটে এক বা একাধিক ছিদ্র করে ক্যামেরা দিয়ে দেখে অস্ত্রোপচার করাকে বলা হয় ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি।

প্রথমে পিত্তথলির অস্ত্রোপচার বেশি করা হলেও পরে নানা অস্ত্রোপচার ও রোগনির্ণয়েও এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। সার্জারির স্থানভেদে অস্ত্রোপচারের নামও বদলে যায়। যেমন এ ধরনের মেশিন দিয়ে বুকে অস্ত্রোপচার করলে বলা হয় থোরাস্কোপিক সার্জারি, অর্থোপেডিকস অস্ত্রোপচারকে বলা হয় আর্থোস্কোপিক সার্জারি ইত্যাদি। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির জন্য নির্ধারিত মেশিন ও দক্ষ টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হয়। বর্তমানে দেশের সব জেলা শহরেই এ ধরনের সার্জারি হয়ে থাকে।

কখন করা হয়?

বেশির ভাগ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিই ঐচ্ছিক সার্জারি। তাই অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর ফিটনেস গুরুত্বপূর্ণ। পেটে বাতাস (কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস) ঢুকিয়ে ফোলানো হয় দেখে অস্ত্রোপচারের সময় বুকে চাপ পড়ে। তাই শ্বাসকষ্ট বা হার্টের রোগীদের অস্ত্রোপচার–পরবর্তী জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ জন্য এগুলো নিয়ন্ত্রণে এনে অস্ত্রোপচার করা হয়।

কী কী অস্ত্রোপচার করা যায়?

উন্নত বিশ্বে বর্তমানে প্রায় সব সার্জারিই ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে করা হয়। আমাদের দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয়ও এ পদ্ধতিতে প্রায় সব ধরনের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। তবে সাধারণত পিত্ত পাথর, অ্যাপেন্ডিক্স, হার্নিয়া সার্জারি এভাবে করা হয়। নারীদের বিভিন্ন রোগনির্ণয়ে ল্যাপারোস্কপি করা হয়। এ ছাড়া ক্যানসার ও টিউমার সার্জারিও এখন এর মাধ্যমে করা হচ্ছে।

সুবিধা

১. ব্যথা কম হয়। ছিদ্র করে অস্ত্রোপচার করা হয় দেখে খুব অল্প কাটা হয়। এ জন্য অস্ত্রোপচার–পরবর্তী রিকভারি সহজ হয়।

২. দ্রুত ক্ষত সেরে যায়।

৩. রক্তপাত কম হয়। মেশিনের ক্যামেরায় সবকিছু অনেক গুণ বড় দেখা যায়। তাই ছোটখাটো রক্তপাতও বন্ধ করা সহজ হয়।

৪. দাগ কম হয়।

৫. রোগী দ্রুত কাজে যোগ দিতে পারেন।

অসুবিধা

১. অনেক সময় অস্ত্রোপচার ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে করা সম্ভব হয় না। তখন কেটে করতে হয়।

২. ল্যাপারোস্কপি মেশিন ঢোকানোর পোর্টে ইনফেকশন ও হার্নিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

৩. অস্ত্রোপচারের সফলতা সার্জনের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। সার্জন ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত না হলে অস্ত্রোপচারের জটিলতা হতে পারে।

প্রচলিত ধারণা

অনেক রোগী মনে করেন, ল্যাপারোস্কপিতে অস্ত্রোপচার পুরোটা হয় না। কিছু বাকি রয়ে যায়। এটা ভুল ধারণা। বিশ্ব এখন ল্যাপারোস্কোপি থেকে রোবোটিক সার্জারির দিকে যাচ্ছে। তাই নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। দক্ষ হাতে এ ধরনের অস্ত্রোপচার হলে তা রোগীর জন্য সুফল বয়ে আনবে।

লেখক : কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সুবহানীঘাট, সিলেট