নারীদের মাসিকের দিনগুলোতে তলপেটে সামান্য অস্বস্তি বা ব্যথা স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু এমন বিশেষ দিনগুলোতে তীব্র ব্যথা, ব্যথায় কাতর হয়ে যাওয়া বা দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হওয়া মোটেও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। নানা রকম জটিলতার কারণে এমন হতে পারে। এমন একটি জটিলতা হলো এন্ডোমেট্রিওসিস।
বিশ্বে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ১ জন এই সমস্যায় ভুগছেন। এই ব্যথা একজন নারীকে সারা জীবন ভোগায়। মাসিকের শুরুতে ব্যথা শুরু হয়। মাঝামাঝিতে এ ব্যথা তীব্র হয় ও মাসিক ভালো হয়ে যাওয়ার পরও কিছুদিন থাকে।
পরের চক্রে আবার এভাবে শুরু হয়। ফলে নারীর স্বাভাবিক জীবনছন্দ ব্যাহত হয়। যাঁদের এই সমস্যা থাকে, তাঁরা মাসিকের দিনগুলোতে আতঙ্ক বোধ করেন। যেহেতু সবাই বলে মাসিকের সময় এমন ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক, তাই বেশির ভাগ কিশোরী চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তলপেটে সেঁক দেওয়া, ব্যথার ওষুধ সেবন ইত্যাদি চালিয়ে যায়।
এতে রোগ শনাক্ত হতে ৮ থেকে ১০ বছর দেরি হয়ে যায়। রোগ যত বাড়ে, উপসর্গ তত তীব্র হয়। একসময় কেবল মাসিকের সময় নয়, মলমূত্র ত্যাগে ব্যথা, সহবাসের সময় তীব্র ব্যথা, হতাশা, বিষণ্নতা, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি জটিলতা দেখা দেয়।
রোগটি পুরোপুরি সেরে না গেলেও একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যাঁদের পরিবারে যেমন মা, খালা, নানির এই সমস্যা আছে, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। অনেকেরই মাসিক চলাকালে তলপেটে রক্ত জমে ডিম্বাশয়ে চকলেট সিস্ট তৈরি হয়। এই রোগটি শনাক্ত করার জন্য রোগীর ইতিহাস জানার পাশাপাশি একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম জরুরি। কখনো এমআরআই দরকার হতে পারে।
ইদানীং এন্ডোমেট্রিওসিসের নানা ধরনের সুলভ চিকিৎসা রয়েছে। একেকজনের জন্য একেক রকম চিকিৎসা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি যে চিকিৎসা করা হয়, তা হলো ওষুধের মাধ্যমে বেশ কিছুদিন মাসিক বন্ধ করে রাখা। কমপক্ষে ৯ মাস থেকে ১ বছর মাসিক বন্ধ রাখা হয়।
এতে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুকে বাড়তে বাধা দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ছাড়াও প্রজেস্টেরন–জাতীয় হরমোন বড়ি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কখনো জিএনআরএইচ–জাতীয় ওষুধও ব্যবহৃত হয়। উচ্চমূল্য এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য অ্যাড ব্যাক থেরাপি প্রচলিত।
এই হরমোনগুলো ব্যবহারের ফলে বেশ ব্যথামুক্ত থাকা যায় ও রোগ সারাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আজকাল এলএনজি-আইইউএস ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যথানাশক ব্যবহার করা যায়।
তবে এসব চিকিৎসা একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। মেডিকেল চিকিৎসা ছাড়াও শল্যচিকিৎসা আছে। ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে চকলেট সিস্ট বের করা, যেখানে অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু আছে, সে জায়গাতে পুড়িয়ে ফেলা ইত্যাদি হলো শল্যচিকিৎসা। তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া এগুলো করা যাবে না।
অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, সভাপতি-এন্ডোমেট্রিওসিস অ্যান্ড এডিনোমায়োসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশ