শিশুর প্রথম খাবার নিয়ে যা জানা জরুরি

ছয় মাসের বেশি বয়সী একটি শিশুর প্রতিদিন ৬০০ ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়।
ছবি: প্রথম আলো

শিশু বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খোঁজা বিষয়গুলোর একটি হলো, শিশুর প্রথম সলিড বা শক্ত খাবার কী কী। ছয় মাসের বেশি বয়সী একটি শিশুর প্রতিদিন ৬০০ ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়। এর ভেতর ৪০০ ক্যালরি সে পায় বুকের দুধ থেকে। আর বাকি ২০০ ক্যালরির জন্য শক্ত খাবার শুরু করতে হয়। ধীরে ধীরে শক্ত খাবারের চাহিদা বাড়ে। শুরুতে অনেক সময় বাচ্চারা খেতে চায় না, আর এটিই স্বাভাবিক। ধৈর্য ধরে শিশুকে একটি একটি করে সহজপাচ্য খাবারের সঙ্গে পরিচয় করাতে হয়।

কী খাওয়াবেন?

শিশুকে ছয় মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে। যত দেরি করবেন, ততই শিশুর খাবারে অনীহা তৈরি হবে। কেননা, বড় শিশুর তুলনায় ছোট শিশুর নতুন খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেশি।

  • রঙিন ফল যেমন আম, কলা, পাকা পেঁপে, ড্রাগন ফল, বেদানার রস খাওয়ানো যেতে পারে।

  • মিষ্টিকুমড়া, আলু, মিষ্টি আলু, গাজর—এগুলো সেদ্ধ করে খাওয়াতে পারেন।

  • ঘরে যে সবজি আর শাক আছে, সেগুলো চাল, ডাল, তেলের সঙ্গে মিশিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। রান্না করা মুরগির মাংস থেকে একটুকরা মাংস তুলে ধুয়ে ছোট ছোট করে ছিঁড়ে শিশুর খিচুরি রান্নার সময় দিতে পারেন। তাদের খাবারে লবণ বা চিনি না থাকাই ভালো।

  • রান্না করা তরকারি থেকে আলু, কাঁচকলা, কুমড়া, পটল বা বরবটি তুলে নিয়ে ধুয়ে ভাতের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে চটকিয়ে খাওয়াতে পারেন।

  • শিশুকে বেশি বেশি ক্যালসিয়াম আর আয়রনযুক্ত খাবার যেমন দুধ, ডিম, পাকা কলা, রান্না করা কাঁচা কলা, ড্রাগন ফল, বেদানার রস, কাঠবাদাম, সয়াবিন খাওয়ান।

  • বাজার থেকে কেনা সেরেলাকের বিকল্প হিসেবে কয়েক পদের ডাল, কয়েক পদের বাদাম, কিসমিস, ওটস, বার্লি বা লাল চালের ভেতর সহজলভ্য তিন/চারটা পদ ধুয়ে ভালোভাবে কড়া রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ড করে একটা কৌটায় রেখে দিতে পারেন। সময়মতো বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ দিয়ে রান্না করে খাওয়াতে পারেন।

  • দুধের সঙ্গে গমের তৈরি বিস্কুট ভিজিয়েও খাওয়াতে পারেন।

ছয় মাস থেকেই ভাত আর খিচুড়ির সঙ্গে পরিচয় করাবেন। সাত মাস বয়স থেকে ভাত বা খিচুড়ি নরম করে রান্না করে খাওয়াবেন। আলু ও শাকসবজির পাশাপাশি রান্না করা মুরগির মাংস থেকে একটুকরা তুলে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে (যাতে ঝাল না থাকে) খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন। সেদ্ধ আলু বা তরকারি থেকে রান্না করা মাছ তুলে ধুয়ে ভালোভাবে কাঁটা বেছে ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন পোচ করা ডিমের নরম অংশ। ভাত খাওয়ানোর সময় মাঝেমধ্যে পানি দিতে ভুলবেন না। দুপুরে গোসলের পর পেট ভরে ভাত খাওয়ালে বাচ্চা অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবে।

  • আট মাস বয়সে খাওয়াতে পারেন দই, বিশেষ করে টক দই।

  • শিশুর বয়স এক বছর না হলে গরুর দুধ না দেওয়াই ভালো। হজমে অসুবিধা হতে পারে।

  • সাত মাস বয়স থেকে শিশুকে প্রতিদিন ভাত-ডাল, রঙিন শাকসবজি, ফল, ডিম, মাছ, মাংস খাওয়ান।

  • ১১ মাসের মধ্যে অ্যালার্জিটিক খাবারগুলো শুরু করা উচিত। নতুন গবেষণা বলছে, এতে ভবিষ্যতে এসব খাবারে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

  • শুরুতে যখন খাবার খাওয়ানো শুরু করবেন, তখন কিছু কিছু খাবার প্রথম খাওয়ার পর বাবুর মল অন্য রকম হতে পারে। বিশেষ করে আম, ড্রাগন ফল ইত্যাদি। মনে হবে, যে রকম খাইয়েছেন, সে রকমই বের হয়ে গেছে। দু/তিনবার খাওয়ানোর পর মানিয়ে নেবে।

  • শিশুকে অন্তত এক বছর বয়স পর্যন্ত মধু খাওয়াবেন না। মধুতে একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা বড়দের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু ছোট শিশুর পাকস্থলীর জন্য ভালো না-ও হতে পারে।

  • শুরুতে দিনে এক থেকে তিনবার, এরপর ধীরে ধীরে পাঁচবার শক্ত খাবার দেবেন। সেই সঙ্গে বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ তো আছেই!

  • ছয় মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবারের পাশাপাশি বাবুকে পানি খাওয়াবেন। কেননা, শক্ত খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পানি খাওয়ার চাহিদা তৈরি হয়।