বায়ুদূষণে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কীভাবে

বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণের দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান এখন পঞ্চম। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স—একিউআই) ঢাকার স্কোর ১৫২, যা তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী ‘অস্বাস্থ্যকর’। এ ছাড়া ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) যতটা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে সাড়ে ১১ গুণ বেশি। এ শহরের প্রতিটি প্রধান সড়কে খালি চোখেই ধুলা উড়তে দেখা যায়। সামনে শীতের মৌসুম, তখন আরও আশঙ্কাজনক হবে এ পরিস্থিতি। এ বছরের শুরুতেই রাজধানীর বাতাসের মান ছিল ‘দুর্যোগপূর্ণ’, গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু বাতাসের দোহাই দিয়ে তো আর প্রতিদিনের কাজকর্ম থেমে থাকবে না। অফিস-আদালত, স্কু–কলেজ চলবে নিজের নিয়মেই। কীভাবে এই ‘অস্বাস্থ্যকর’ পরিস্থিতিতেও নিজেকে মানিয়ে চলবেন, জেনে নিন সে বিষয়েই কিছু টিপস।

বায়ুদূষণে নিজেকে সুস্থ রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ
অলংকরণ: আরাফাত করিম

মাস্ক সব সময়


করোনাকালে সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের মধ্যে চালু হয়েছিল মাস্ক পরার প্রবণতা। নিজে করোনা থেকে বাঁচতে ও অন্যকে বাঁচাতে সে সময় মাস্কের কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্কও ব্রাত্য হয়ে পড়েছে অনেকের জীবনে। কালেভদ্রে কারও মুখমণ্ডলে দেখা মেলে মাস্কের। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে মাস্ক ব্যবহার করা। বাসা থেকে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বের হলেও মুখে থাকা চাই মাস্ক।


ঘরেই চলুক শরীরচর্চা


সকালবেলা উঠেই শরীরচর্চার জন্য বাইরে বেরিয়ে পড়া অনেকেরই পুরোনো অভ্যাস। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় যতটা সম্ভব বাসার ভেতরে থাকা যায়, ততই ভালো। বিশেষ করে শরীরচর্চা যতটা ঘরের ভেতর শেষ করা সম্ভব, তত ভালো। শরীরচর্চা করতে গিয়ে উল্টো শরীরের ক্ষতি করার কোনো অর্থ হয় না। জিম কিংবা গলির মোড়ে শরীরচর্চা করার থেকে বাসায় করা অনেক উপকারী। তবে তুলনামূলক সুন্দর পরিবেশ, যেমন রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত সবুজ-শ্যামল জায়গায় শরীরচর্চা করতে যেতে পারেন। গাছপালা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এলাকায় দূষিত বায়ুর পরিমাণ বেশ কম থাকে।

এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন


শহরের বায়ু অস্বাস্থ্যকর বলে যে ঘরে সব ঠিকঠাক, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। বলা যায়, যান্ত্রিক শহরের তুলনায় ঘরের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। তাই বলে যে ঘরে সতর্কতা অবলম্বন করা যাবে না, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। ঘরের বায়ুকে স্বাস্থ্যকর রাখতে ব্যবহার করতে পারেন এয়ার পিউরিফায়ার। ঘরের পরিবেশকে সুস্থ রাখতে এয়ার পিউরিফায়ারের বিকল্প হয় না। বাসায় অসুস্থ কিংবা বৃদ্ধ আত্মীয়স্বজন থাকলে তাদের জন্য এয়ার পিউরিফায়ার বেশ উপকারী।

বায়দূষণ প্রতিরোধে গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। তাই ঘরে, বাইরে, অফিসে গাছ লাগান

ঘরে–বাইরে, অফিসে গাছ লাগান


ঘর ও অফিসের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অনেকেই ছোট ছোট গাছ রোপণ করেন। সেখানে প্রাধান্য পেতে পারে বায়ু বিশুদ্ধকরণ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা, আইভি, স্পাইডার প্ল্যান্ট–জাতীয় গাছ বায়ু বিশুদ্ধকরণ উদ্ভিদ হিসেবে জনপ্রিয়। এতে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পেল, তেমনই ঘরে সুস্থ পরিবেশও বজায় থাকল।


স্বাস্থ্যকর খাবার খান


বায়ুদূষণ ঢাকা শহরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বায়ুদূষণকে টেক্কা দিতে স্বাস্থ্যকর খাবারের শরণ নিন। ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও ই–যুক্ত খাবার যত বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা সম্ভব, তত ভালো। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল থেকেই মূলত এসব ভিটামিন পাওয়া সম্ভব। এতে বায়ুর মাধ্যমে শরীরে ক্ষতিকারক পদার্থ প্রবেশ করলেও তা শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে পানি পান শরীরে প্রবেশ করা ক্ষতিকারক পদার্থকে দ্রুত বের করে নেয়।