ভালো থাকুন

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা জিবিএস খানিকটা অপরিচিত হলেও একটি জটিল রোগ। রোগটি স্নায়ুজনিত, কিন্তু এতে দেহের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে নড়াচড়া করার সামর্থ্যও হারিয়ে যায়।

যেকোনো বয়সেই জিবিএস হতে পারে। কিন্তু ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সে এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। জিবিএসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়ার পর ৮০ শতাংশ রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তবে ১০ শতাংশ রোগীর কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায়।

যেকোনো বয়সেই জিবিএস হতে পারে। কিন্তু ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সে এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

কেন হয়

জিবিএসের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যেমন এইডস, হার্পিস সিমপ্লেক্স, ম্যাগনিওক্লিওসিস ইত্যাদিতে; ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে এবং অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পর এ রোগ হতে পারে। ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীরা পরবর্তী সময়ে ইমিউনোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়ার কারণে জিবিএসে আক্রান্ত হতে পারেন।

লক্ষণ

  • জিবিএস হলে দ্রুত উপসর্গগুলো দেখা দেয় এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর হাত ও পা অবশ হয়ে যায়।

  • প্রথমে পা থেকে দুর্বলতা শুরু হয় এবং দুই পা একসঙ্গে আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে পা থেকে কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে যায় এবং তারপর ওপর দিকে আক্রান্ত হলে দুই হাতও অবশ হতে শুরু করে। মাংসপেশিতে ব্যথা হয়।

  • স্বাভাবিক নড়াচড়ার সামর্থ্য হারিয়ে যায়। যদি বুকের খাঁচার পেশি আক্রান্ত হয়, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসতন্ত্রের মাংসপেশি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অনেক সময় এসব রোগী মারাও যান।

শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা

জিবিএস রোগের উপসর্গ অন্য কিছু নিউরোলজিক্যাল রোগের সঙ্গে মিলে যেতে পারে। তবে বিস্তারিত ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা এ রোগ নির্ণয়ে প্রায় পুরোপুরি সহায়ক। তবু কারও কারও ক্ষেত্রে স্পাইনাল ট্যাপ বা লাম্বার পাংচার করে স্নায়ুর পরীক্ষা, ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি, নার্ভ কনডাকশন স্টাডিজের মাধ্যমে রোগ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করার দরকার পড়ে।

দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে এ রোগ সারতে ছয় থেকে বারো মাস লাগতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে পুরোপুরি সারতে তিন বছরের মতো লেগে যেতে পারে। রোগীর অবস্থা ও ধরন দেখে দুই ধরনের চিকিৎসা হতে পারে। এর একটি প্লাজমা এক্সচেঞ্জ, অন্যটি ইমিউনোগ্লোবিউলিন থেরাপি। অনেক সময় দুই ধরনের চিকিৎসারই প্রয়োজন হয়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ ছাড়া ব্যথা কমানো, রক্ত জমাট না বাঁধার জন্যও চিকিৎসা লাগে।

  • ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা