শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনার জন্য পানি মুখ্য ভূমিকা পালন করে
শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনার জন্য পানি মুখ্য ভূমিকা পালন করে

পানি খাওয়ার সময় যে ৫ ভুল আমরা হরহামেশাই করি

একজন মানুষের কতটুকু পানি প্রয়োজন, তা তাঁর শারীরিক অবস্থা, পরিশ্রম, আবহাওয়া ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। তাই পানি খেতে হবে নিয়ম মেনে, প্রয়োজন অনুসারে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাটের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনার জন্য পানি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে ভুল উপায়ে পানি পান করলে উপকারের বদলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

পানি পানের ক্ষেত্রে হামেশাই যে পাঁচটি ভুল আমরা করি, সেগুলোর কথা জেনে নেওয়া যাক।

১. খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি পান

বেশির ভাগ মানুষ খাওয়ার আগে পানি খেয়ে আবার পানির মগ নিয়ে বসেন। এরপর খাওয়ার মধ্যেও একটু পরপর পানি খান। খাবার শেষ করে আবার ঢকঢক করে পানি খান। কিন্তু এসব আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তো নয়ই, বরং নানান শারীরিক অসুবিধার কারণ। কেননা, যখন আমরা খাবার খাই, তখন হজমপ্রক্রিয়ার জন্য আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় পানি পান করলে তা আমাদের গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে পাতলা করে দেয়, যা হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসব থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো খাবারের পর পানি না খেয়ে কুলি করে ফেলা।

২. ঢকঢক করে পানি পান

পানি ঢকঢক করে না পান করলে যেন তৃষ্ণাই মেটে না। কিন্তু এভাবে পানি পান করলে শরীর তা ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। এর ফলে কোনো কাজ না করে তা প্রস্রাব আকারে বের হয়ে যায়। তাই পানি অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে পান করুন। প্রয়োজনে বড় ছিপির পরিবর্তে ছোট ছিপিযুক্ত বোতল ব্যবহার করুন।

৩. ঠান্ডা পানি পান

দৌড়ে এসে ফ্রিজ থেকে পানি বের করে পান করা অনেকেরই অভ্যাস। ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে গলাব্যথা, রক্তনালি সংকুচিত হওয়াসহ বদহজমের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া জয়েন্টে ব্যথা ও হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা যায় ঠান্ডা পানি পান করার ফলে। তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করুন। কুসুম-গরম পানি হলে আরও ভালো।

৪. কম অথবা বেশি পানি পান

অনেকেই মনে করেন, যত বেশি পানি পান করা যায়, তত উপকার। কিন্তু অতিরিক্ত পানি শরীরের লবণ ও ইলেক্ট্রোলাইট পাতলা করে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। এই ভারসাম্যহীনতার ফলে শরীরের কোষ, এমনকি মস্তিষ্কের কোষও ফুলে যায়, যা বিপজ্জনক। আবার কম পানি পান করাও ক্ষতিকর।

৫. দাঁড়িয়ে পানি পান

দাঁড়িয়ে কিংবা হাঁটা অবস্থায় পানি পান করা বিপজ্জনক। এতে আমাদের কিডনি সঠিকভাবে ছাঁকনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না। দাঁড়ানো কিংবা হাঁটা অবস্থায় আমাদের শরীরের পেশিগুলো শিথিল (রিল্যাক্সড) থাকে না। এতে আমাদের শরীরের জয়েন্টগুলোতে পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি বাতব্যথার মতো রোগও হতে পারে।

তাহলে কখন এবং কতটুকু পানি পান করবেন?

যখন পিপাসা বোধ করবেন, তখনই পানি পান করুন। পানি পানের সর্বোত্তম সময় হলো ঘুম থেকে ওঠার পর। সকালের লালা পাকস্থলীর অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে অত্যন্ত কার্যকর। তাই দাঁত ব্রাশ করার আগে পানি পান করুন। খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট আগে এবং ১ ঘণ্টা পরে পানি পান করুন।

একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন ওজন, বয়স, শারীরিক অবস্থাভেদে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা যথেষ্ট।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট