অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার একটি স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য, সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে বাধা, আশপাশের মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানে সমস্যা ও একই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি।
অটিজম রয়েছে এমন শিশুর ভাষা শিখতে সমস্যা হয়, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা বা সংবেদনহীনতা থাকতে পারে, পাশাপাশি কখনো আচরণের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না, চোখে চোখ রেখে তাকায় না। কারও কারও অটিজমের সঙ্গে অতিচঞ্চল অমনোযোগিতা (এডিএইচডি) কিংবা খিঁচুনি থাকতে পারে।
অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো শিশুর বিকাশের যেকোনো বয়সে দেখা দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিন বছর বয়সের কাছাকাছি দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুও বয়ঃসন্ধিতে পা রাখে। অর্থাৎ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স তাদেরও অতিক্রম করতে হয়।
অন্যান্য শিশুর মতো তাদের দেহে-মনেও বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন আসতে থাকে। এমন শিশুর দেহ-মনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু বেশি বেগ পেতে হয়, তাদের নানা রকম আচরণের সমস্যা দেখা দেয়, কখনো শারীরিক নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়ে। এ জন্য যেসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন:
বয়ঃসন্ধিকাল আসার আগে থেকেই এমন শিশুকে নানা মাধ্যমে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে যে তার দেহ আর মনে কিছু পরিবর্তন আসবে। কাউকে গল্পের মাধ্যমে, কাউকে ছবি ব্যবহার করে পরিবর্তনগুলো বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।
শারীরিক আর মানসিক নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোর নাম শেখাতে হবে। সেগুলো অন্যরা যাতে স্পর্শ করতে না পারে, সে জন্য ‘অনিরাপদ স্পর্শ’, ‘নিরাপদ স্পর্শ’ বিষয়গুলো রোল প্লে করে বা ছবির মাধ্যমে বারবার অনুশীলন করে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। সে–ও যেন অন্যের শরীর অযাচিতভাবে স্পর্শ না করে, এটাও বোঝাতে হবে।
দৈনন্দিন সাধারণ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকালে আরও কিছু বিশেষ পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
এমন শিশু বয়ঃসন্ধিকালে অনেক সময় আগ্রাসী আচরণ করে। প্রথমত, কেন এমনটা করছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রতিটি শিশুই ভিন্ন। তাই একই পদ্ধতি সবার জন্য সমান প্রযোজ্য না–ও হতে পারে।
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, শিশু–কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা