স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ত্বকের খুবই সংক্রামক একটি সমস্যা। এ জন্য দায়ী সারকপটিস স্ক্যাবি নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু। এ রোগ যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। তবে শিশুদের বেশি হতে দেখা যায়। এ রোগে চামড়ার ওপর প্রথমে রস ও পরে পুঁজযুক্ত বড় বড় ফুসকুড়ি হয়। শুরুতে আক্রান্ত স্থান অত্যন্ত চুলকায়। রাতে চুলকানি তীব্র হয়।
পাঁচড়া ত্বকের অন্য সমস্যা যেমন অ্যালার্জি, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে আলাদা। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই মাইট (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু) ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই জীবাণু মানুষের ত্বকের ঠিক নিচের অগভীর স্তরে বাস করে এবং দিনে দুই-তিনটা ডিম পাড়ে।
● পাঁচড়ার অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে প্রচণ্ড চুলকানি এবং ত্বকের ওপরে ফোসকা পড়া বা লাল হয়ে ফুলে যাওয়া। সাধারণত আঙুলের ফাঁকে এবং ত্বকের ভাঁজের মধ্যে হয়ে থাকে পাঁচড়া। এর চুলাকনি খুব মারাত্মক এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতে বাড়ে।
● নবজাতক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নিচে পাঁচড়া হয়ে থাকে।
● যদি কারও একবার পাঁচড়া হয়, তাহলে পুনরায় এটি হলে লক্ষণ কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়। যাঁদের আগে কখনো হয়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশিত হতে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে।
● তবে রোগটি সহজে সারতে চায় না ও ভীষণ ছোঁয়াচে। তাই সতর্কতা ও চিকিৎসা প্রয়োজন।
● সাধারণত একই বিছানায় শোয়া বা ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে থাকলে, একই কাপড়চোপড় বা তোয়ালে ব্যবহার করলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
● আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলালেও এ রোগ ছড়াতে পারে। এ কারণে একই পরিবারে, স্কুলে, হোস্টেলে রোগটির প্রাদুর্ভাব অনেকের মধ্যে একসঙ্গে দেখা দেয়।
● রোগীর শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসক আক্রান্ত ত্বকের নমুনা মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করে মাইট ও এর ডিম শনাক্ত করে রোগ নির্ণয় করেন।
● চিকিৎসা খুবই সহজ। একটি হলো পারমেথ্রিন নামের ক্রিম ব্যবহার করা। এই ক্রিম রোগীর ঘাড় থেকে পায়ের পাতার নিচ পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়। অন্যটি হলো ইভারমেকটিন–জাতীয় ওষুধ, যা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
● চিকিৎসকেরা কখনো কখনো পারমেথ্রিনের পরিবর্তে ক্রোটামিটন বা লিন্ডেন লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন–জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।
● সফল চিকিৎসার পরও এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চুলকানি হতে পারে।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল