আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে। আসুন জেনে নিই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কয়েকটি উপায়—
১. নিয়মিত পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খেতে হবে।
২. রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।
৩. শরীরচর্চায় দেহ-মন উৎফুল্ল থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
৪. দিনের কিছুটা সময় (সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে) সূর্যের আলো গায়ে লাগাবেন।
৫. অহেতুক দুশ্চিন্তা করবেন না।
৬. পরিবারের মানুষ, প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
৭. নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
৮. দুশ্চিন্তা কমাতে যেসব কাজ করতে ভালো লাগে, সেগুলো খুঁজে বের করুন। যেমন গান শোনা, শরীরচর্চা করা, সিনেমা দেখা বা গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ইত্যাদি।
৯. দিনের কিছুটা সময় সম্পূর্ণ নিজের জন্য রাখুন।
১০. মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠুন।
১১. আন্তরিকভাবে ও যতটুকু পারেন গুছিয়ে কাজ করার চেষ্টা করুন। এ জন্য রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন।
১২. যেকোনো কিছু নিয়ে ভুল হলে সাময়িকভাবে মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু অপরাধবোধ ও লজ্জাবোধে ভুগবেন না।
১৩. মাঝেমধ্যে ব্যস্ততার মধ্যেও দূরে কোথাও ঘুরে আসুন। কাজের মাঝে বিরতি নিন।
১৪. মনের কথা নিজের মধ্যে চেপে না রেখে প্রিয়জন এবং বিশ্বস্ত মানুষের সঙ্গে শেয়ার করুন।
১৫. মাঝেমধ্যে ভালো লাগার বিষয়গুলোর কথা ভাবুন বা অতীত কোনো সুখস্মৃতির কথা মনে করুন।
১৬. অপরকে সাহায্য করুন। অন্যকে খুশি করতে পারলে নিজেরও ভালো লাগা কাজ করে।
১৭. নতুন কোনো বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
১৮. বর্তমান সময়ে মনোযোগ দিন, অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে অহেতুক চিন্তা করবেন না।
১৯. কিছু সময় মুঠোফোন, টিভি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন রকম ডিজিটাল যন্ত্র থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
২০. মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করলে এবং যদি তা আপনার দৈনন্দিন কাজকে ব্যাহত করে, তাহলে মনোরোগ–বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। শিশু-কিশোর ও তরুণদের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এ জরিপের হিসাব অনুযায়ী বলা যায়, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ মানসিক সমস্যা বা রোগে আক্রান্ত।
এর মধ্যে কোভিড মহামারির কারণে বর্তমানে মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তি, যাঁরা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়াও পরিবারের সদস্য ও সমাজের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কোভিড মহামারি ছাড়াও সারা পৃথিবীতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা এবং যুদ্ধবিগ্রহের কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
মানসিক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা মানসিক রোগের সুচিকিৎসা গ্রহণে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যেন সুচিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন, সে জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক রোগীকে পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন প্রদান করা জরুরি।
*ডা. তাইয়েব ইবনে জাহাঙ্গীর: মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা