ঘাড়ে কালো দাগ কেন হয়

অনেকের, বিশেষ করে নারীদের গলায় ও ঘাড়ে কালো দাগ দেখা যায়। এই দাগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যাকানথোসিস নিগ্রিকানস। অনেকে এই দাগকে ময়লা ভেবে ভুল করেন। পরিষ্কার করতে সাবান দিয়ে ঘষতে থাকেন। অতিরিক্ত ঘষলে ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এতে দাগ আরও গাঢ় হয়।

এই সমস্যায় শুধু ত্বক কালোই হয় না, ত্বকের পুরুত্বও বেড়ে যায়। পরে ত্বকে ভাঁজ ও চুলকানি হয়। অনেক সময় ত্বক জ্বলে। কখনো কখনো ঘামের দুর্গন্ধ হয়। চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের ৮০ শতাংশই এই সমস্যায় ভুগতে পারেন।

কারণ

ঘাড় ও গলার এই দাগ মূলত ওজন বেশির কারণে হয়। জিনগত কারণেও হতে পারে। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, পিসিওএস ও হাইপারথাইরয়েডিজম থাকলে এই প্রবণতা বেশি হয়। ঘাড় ও গলায় প্রখর রোদ পড়েও সানবার্ন হয়ে এ দাগ হতে পারে। বিভিন্ন ধাতুর মোটা চেইন পরলেও হতে পারে।

এ ছাড়া নিম্নমানের ট্যালকম পাউডার, ডিওডোরেন্টস ও পারফিউম স্প্রে, লোশন ও স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম ব্যবহারেও গলা ও ঘাড়ের ত্বক কালো হতে পারে। চুলে রং করার সময় রঙের রাসায়নিক উপাদান গলা ও ঘাড়ে লেগে জ্বালা করে। পরে ধীরে ধীরে গলা ও ঘাড়ে কালো দাগ হতে শুরু করে।

প্রতিকার

সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমাতে হবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চিকিৎসা দরকার। ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে গলা ও ঘাড় পানি দিয়ে ধুয়ে বেনজয়াইল পার–অক্সাইড (৪%) অথবা স্যাসলিক ফোম (২%) ব্যবহার করতে পারেন।

পরে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে নারিকেল তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নেওয়া যায়। প্রতি রাতে রেটিনো এ ক্রিম ০.০২৫% ব্যবহার করা যায়। রেটিনো এ ০.০৫%, বা অ্যাডাপালিন জেল ০.১%, বা তাজারোটিন জেলের যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন।

এই ক্রিম বা জেল ব্যবহারের সুবিধা পেতে অন্তত ৩ মাস নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। ট্যালকম পাউডার দায়ী হলে তা ব্যবহার বন্ধ করুন। সুগন্ধি, ডিওডোরেন্টস, সস্তা লোশন ও স্টেরয়েড ক্রিম বাদ দিন। অ্যামোনিয়াযুক্ত চুলের রঙের পরিবর্তে প্রাকৃতিক চুলের রং ব্যবহার করুন।

প্রখর রোদের কারণে দাগ হলে ১ চামচ হলুদ, ২ চা চামচ লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে গলা ও ঘাড়ে আধ ঘণ্টা রেখে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বাইরে বেরোনোর আগে পিএসএফ ৫০+ মানের সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন। গলা বেশি না ঘষাই ভালো।

  • ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল