ঘুম কম হলে কত কিছুই তো হয়। স্মৃতি সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় গড়বড় হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। কর্মক্ষমতা, কর্মোদ্যম কমে যায়। বিষাদে ভরে যায় মন। কিন্তু কম ঘুমালে আপনি স্বার্থপর হয়ে উঠতে পারেন, এমনটা ভেবেছিলেন কখনো? ঘুম নিয়ে সাম্প্রতিক তিনটি গবেষণা এ কথাই বলছে।
নির্ঘুম রাত মানুষের আচরণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ হয়ে উঠতে পারে ভীষণ স্বার্থপর। ঘুমের সঙ্গে স্বার্থপরতার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণাগুলো প্রকাশিত হয়েছে ‘পিএলওএস বায়োলজি জার্নালে’। গবেষণাগুলো পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা। সিএনএন এ গবেষণার ফলাফলকে বলছে ‘বিস্ময়কর’। এখানে বলা হচ্ছে, ঘুমের ঘাটতি মানুষের মনকে নেতিবাচকভাবে বদলাতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। অন্যকে সাহায্য করার যে মানসিকতা, কেবল এক ঘণ্টা কম ঘুমেই তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।
১. প্রথম গবেষণা: দানের ওপর ঘুমের প্রভাব
প্রথম গবেষণাটি দান–সম্পর্কিত। অন্যকে উপকার করার সবচেয়ে সরাসরি উপায় হলো অর্থ দান করা। ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের ৩০ লাখ দানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, যখনই ‘ডে লাইট সেভিং টাইম’ সিস্টেম চালু হয়, তখনই দানের পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। কেননা এই সময় মানুষকে সূর্যের আলো অধিক ব্যবহারের জন্য ঘুম থেকে ভোরবেলা উঠতে হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত এক ঘণ্টা কম ঘুমাতে হয়েছে। আর যেসব এলাকায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয়নি, সেখানে দানের পরিমাণে কোনো কমতি দেখা যায়নি।
২. দ্বিতীয় গবেষণা: ২৪ তরুণের ওপর পরীক্ষা
প্রথম গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলটি ‘ক্রস চেক’ করে দেখার জন্য দ্বিতীয় গবেষণাটি করা হয়। এটি করা হয় ২৪ তরুণের ওপর। প্রথম রাতে তাঁদের আট ঘণ্টা আরামে ঘুমাতে দেওয়া হয়। আট ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পর তাঁদের মস্তিষ্কের এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) করা হয়। পরের দিন ওই ২৪ জনকে সারা রাত নির্ঘুম রেখে একই পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষায় মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে পার্থক্য দেখা যায়। গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমের ঘাটতি হওয়ায় প্রোসোশ্যাল নিউরাল নেটওয়ার্ক কম সক্রিয় থাকছে। কী পরিমাণ কম সক্রিয় থাকছে, সেটা মানুষ ভেদে ভিন্ন। তবে সবার ক্ষেত্রেই নিশ্চিতভাবে কমেছে। আর মস্তিষ্কের এই অংশই মানবিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
৩. তৃতীয় গবেষণা: ঘুমের পরিমাণ ও গভীরতা বিষয়ক
প্রথম দুটি গবেষণায় কেবল ঘুমের পরিমাণ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। তৃতীয় গবেষণায় ১০০ মানুষের ৩ দিনের ঘুমের পরিমাণ ও গভীরতা—দুই-ই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাতে গবেষকেরা দেখেছেন, কতক্ষণ ঘুমানো হচ্ছে, তার সঙ্গে ঘুমের গভীরতা—দুটোই মন আর কগনিটিভ ফাংশনে প্রভাব ফেলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণের চেয়ে ঘুমের গভীরতা বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে। এ গবেষণা থেকে জানা যায়, পর্যাপ্ত ও আরামদায়ক ঘুম মানুষের আবেগ ও সামাজিক আচরণে ছাপ ফেলে। সুন্দর ঘুম মানুষকে সামাজিক আর মানবিক করে।