কোনো কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়
কোনো কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়

ওষুধের কারণেও হতে পারে চোখের ক্ষতি, জেনে রাখুন সমাধান

অপটিক নিউরোপ্যাথি হচ্ছে অপটিক নার্ভের একধরনের প্রদাহ। এই নার্ভ হলো চোখের সঙ্গে মস্তিষ্কের একমাত্র স্নায়ু সংযোগ। ফলে কোনো কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়।

কেন অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয়

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মেথিলেটেড স্পিরিট সেবনে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একে বলে টক্সিক অপটিক নিউরোপ্যাথি। অপটিক নার্ভের জন্য ক্ষতিকর ওষুধের একটি হলো যক্ষ্মারোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ, যেমন ইথামবিউটল। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে এর ডোজ ও মেয়াদের ওপর। প্রতিদিন ৩৫ মিলিগ্রাম মাত্রায় তিন থেকে ছয় মাস ব্যবহারে অপটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে।

ইথামবিউটল কিডনির মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়। তাই যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এর ডোজ সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। যক্ষ্মার আরেক ওষুধ আইসোনায়াজাইড বা আইএনএইচ ব্যবহারেও অপটিক নিউরোপ্যাথি হতে পারে, বিশেষ করে ইথামবিউটলের সঙ্গে একত্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। মৃগী রোগ বা এপিলেপ্সি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ যেমন ভিগাবাট্রিন ৩ গ্রাম প্রতিদিন ডোজে অপটিক নিউরোপ্যাথি হতে পারে।

অ্যান্টিক্যানসার ওষুধ, যেমন মিথোট্রেক্সেড ব্যবহারে বিশেষ করে দেহে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলে অনেক সময় অপটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে।

অন্যান্য কারণ

অপটিক নিউরাইটিস বা অপটিক নার্ভের প্রদাহ, টিউমার, আঘাত, জন্মগত ত্রুটি, টক্সিক নিউরোপ্যাথি ও নিউট্রিশনাল (পুষ্টিজনিত) নিউরোপ্যাথি। প্রদাহের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ, অটোইমিউন ডিজিজ, যেমন এসএলই, পলিআর্টারাইটিস নডোসা ইত্যাদি। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, টেম্পোরাল আর্টারাইটিস ও মাল্টিপল স্কে¬রোসিসেও অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

লক্ষণ

হঠাৎ এক বা দুই চোখে দৃষ্টি কমে যায়। অন্যান্য উপসর্গ প্রায় সময় অনুপস্থিত থাকে। দৃষ্টি সমস্যার পাশাপাশি কালারভিশন সমস্যা বা রং চিনতে অসুবিধা হয়। এ রোগের দ্রুত চিকিৎসা নিতে হয়। নইলে স্থায়ী অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। মেথিলেটেড স্পিরিটজনিত অপটিক নিউরাইটিসে প্রাণহানির ঝুঁকির সঙ্গে অতিরিক্ত উপসর্গ হিসেবে পেটব্যথা, বমি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কনফিউশনের মতো উপসর্গ থাকে।

চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই রোগ এমনিতে উপশম হয়। সাধারণত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন বি-৬, বি-১ ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। হঠাৎ এক বা দুই চোখে দৃষ্টি একদম কমে গেলে সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অপটিক নার্ভের জন্য বিপজ্জনক ওষুধ সেবনের শুরুতে চোখের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা