শরীরে আমিষের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেহের টিস্যু ও অঙ্গের গঠন কার্যকারিতা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমিষ খুবই প্রয়োজন। প্রকৃতিতে ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের আমিষ গ্রহণে সাহায্য করে। আমিষ আমাদের দেহে পেশি গঠনের পাশাপাশি এনজাইম, নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন তৈরি করতে অ্যামাইনো অ্যাসিড ব্যবহার করে। প্রাণিজ আমিষ মানবদেহে সহজে শোষিত হয়, তাই এটি সম্পূর্ণ আমিষ। অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ আমিষকে অসম্পূর্ণ আমিষ হিসেবে ধরা হয়।
যেসব খাবারে পর্যাপ্ত আমিষ নেই, সেসব খাওয়ার পর আমাদের দ্রুত খিদে পায় ও ক্লান্তি লাগে। এ ছাড়া দেহে পর্যাপ্ত আমিষের চাহিদা পূরণ না হলে ঠিকমতো বেড়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। চুলপড়ার সমস্যা, গায়ের রং ফ্যাকাশে, মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, পায়ের গোড়ালিতে পানি জমে ফুলতে থাকার মতো নানা অসুবিধা দেখা দেয়। কমে যায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। আমিষযুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির রাখতে, হরমোনের ভারসাম্য আর ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
দৈনিক কতটা আমিষ
আমরা কতটা আমিষ গ্রহণ করব, তা নির্ভর করবে বয়স, লিঙ্গ ও স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর। সাধারণত শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে ন্যূনতম ০.৮-১ গ্রাম আমিষযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত। যাঁরা ভারী ব্যায়াম করেন, তাঁদের ওজনের ভিত্তিতে দেড় থেকে দুই গ্রাম পরিমাণ আমিষ দরকার। মানে কারও ওজন যদি ৬০ কেজি হয় আর তিনি ভারী শরীরচর্চা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ১১০ থেকে ১২০ গ্রাম আমিষ খেতে হবে। কারণ, ব্যায়ামের পর শরীরে পেশি সুস্থ করে তুলতে আমিষ খাওয়া আবশ্যক।
উচ্চ আমিষ যাঁদের দরকার
১. যাঁরা পেশি ভর হারাতে চান না।
২. বয়স্ক লোকদের পেশি ভর ধরে রাখতে চাইলে।
৩. শিশু ও কিশোরদের।
৪. দীর্ঘস্থায়ীভাবে অসুস্থ থাকার পর পেশি ও টিস্যু মেরামতের জন্য।
৫. যাঁরা ওজন কমাতে চান।
৬. অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীদের।
৭. যাঁরা নিরামিষাশী।
৮. যাঁরা ক্রীড়াবিদ বা পেশি তৈরি করতে চান।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটের মতো অতিরিক্ত আমিষও চর্বিতে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই অতিরিক্ত আমিষ খাবেন না। যাঁদের কিডনির রোগ আছে, তাঁরা আমিষ কম খাবেন। পাশাপাশি রাতের খাবারে বেশি আমিষ গ্রহণ করলে অনেকের হজম করা কঠিন হতে পারে। যেমন আইবিএস বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সজনিত সমস্যা যাঁদের আছে।
আমাদের প্রতিটি খাবারে ২০ থেকে ৪০ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা উচিত। কোন খাবারে কতটুকু আমিষ আছে, তার একটি ধারণা রাখুন এবারে—
ডিমে আছে (কুসুমসহ) ৬ গ্রাম আমিষ।
মাঝারি আকারের মুরগির টুকরায় (৩০ থেকে ৪০ গ্রাম) ৭ থেকে ৮ গ্রাম আমিষ আছে।
মাছ বড় এক টুকরায় (৭০ থেকে ৮০ গ্রাম) ১২ থেকে ১৫ গ্রাম আমিষ থাকে।
এক মুঠো চিনাবাদামে ৪.৫ থেকে ৫ গ্রাম আমিষ আছে।
এক গ্লাস দুধে আছে (২৫০ মিলি) ৮ গ্রাম আমিষ।
১০০ গ্রাম ডালে ৭ থেকে ৮ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়।
যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা আমিষের জন্য ছোলা, রাজমা, ডাল, মটরশুঁটি, সয়াবিন, বাদাম, তিসি ইত্যাদি খেতে পারেন।
১. কুমড়ার বীজ শুকিয়ে সেটি তরকারিতে ব্যবহার করতে পারেন।
২. বাদাম গুঁড়া করে যেকোনো মিল্কশেক বা দুগ্ধজাত যেকোনো খাবারে, যেমন সেমাই, সুজি, পায়েসে দিয়ে খেতে পারেন।
৩. ডাল গুঁড়া করে রাখলে তার সঙ্গে বাদাম মিশিয়ে বড়া বানিয়ে খেতে পারেন।
৪. ডালের গুঁড়া বা বেসন দিয়ে মাছের বড়া তৈরি করে খাওয়া যায়।
৫. ডিম-দুধ দিয়ে পুডিং তৈরি করে খেতে পারেন।
৬. সয়াবিনের দুধ বা বাদামের দুধ দিয়ে যেকোনো স্মুদি বানিয়ে খেলেও আমিষ পাওয়া যায়।