মুখের নানান অংশেই হতে পারে ব্রণ। মুখের কোথায় বা কোন অংশে ব্রণ হলে তা কোন শারীরিক সমস্যাকে নির্দেশ করে, তা নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণার প্রচলনও আছে। যেমন ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে ব্রণ হওয়ার সঙ্গে লিভার বা কিডনির সমস্যার সংযোগ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই তথ্য কি আদতে ঠিক? মুখের বিভিন্ন অংশে ব্রণের বৈজ্ঞানিক কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক। তাতে ব্রণ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা অনেকটাই সহজ হবে।
‘হেয়ারলাইন’ অর্থাৎ মুখমণ্ডলের ত্বক আর মাথার ত্বকের মাঝখানের যে অংশ, তার কাছাকাছি জায়গায় যদি প্রায়ই ব্রণ হয়, তাহলে চুলের যত্নে ব্যবহৃত প্রসাধন এর জন্য দায়ী হতে পারে। চুলে ব্যবহৃত প্রসাধন এই জায়গার ত্বকে জমে ত্বকের স্বাভাবিক ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে। পেট্রোলিয়াম জেলি বা মিনারেল অয়েল–সমৃদ্ধ, বেশ পুরু বা ভারী ঘনত্বের প্রসাধন ব্যবহারে এ রকম হয়। এ জায়গার ব্রণ এড়াতে যা করতে পারেন—
পেট্রোলিয়াম জেলি–জাতীয় প্রসাধন এড়িয়ে চলুন। কোকোয়া বাটার–সমৃদ্ধ কিংবা চুলের রং হিসেবে ব্যবহৃত পণ্যের কারণে এখানে ব্রণ হতে পারে। এসব এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। এ ধরনের কোনো প্রসাধন ব্যবহার করলেও তারপর ভালোভাবে মুখের ত্বক পরিষ্কার করুন।
চুলে স্প্রে বা ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় মুখের ত্বক ঢেকে রাখুন হাত বা তোয়ালে দিয়ে।
সপ্তাহে এক-দুবার সাধারণ শ্যাম্পুর পরিবর্তে ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
ত্বকের তৈলাক্ততার কারণে মুখের ‘টি জোন’, অর্থাৎ কপাল আর নাকে ব্রণ হয়। তাই ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশ বা পরিষ্কারক ও অন্যান্য প্রসাধনসামগ্রী বেছে নেওয়া জরুরি। আবার মানসিক চাপের কারণেও এই অংশে ব্রণ হতে পারে। মানসিক চাপ সামলে চলতে চেষ্টা করুন। সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া, রোজ অল্প সময়ের জন্য হলেও শরীরচর্চা করা, পছন্দের অডিও ক্লিপ শোনা, বই পড়া কিংবা ধ্যান করার মতো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন মানসিক চাপ মোকাবিলায়। এ ছাড়া খেয়াল করুন, ত্বকের এই অংশ বারবার স্পর্শ করার অভ্যাস আছে কি না। নিজের অপরিষ্কার হাতের কারণেও এসব জায়গায় সহজে ব্রণ হতে পারে। এই বদভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি।
এক পাশের গালে বারবার ব্রণ হওয়ার কারণ হতে পারে মুঠোফোন, বালিশের কভার কিংবা আপনার নিজের হাতে লেগে থাকা ময়লা। তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভার বদলানো জরুরি। এ ছাড়া প্রতিবার মুঠোফোন ব্যবহারের আগে তা মুছে নেওয়া উচিত। মুঠোফোন নিয়ে বাথরুমে যাবেন না। ময়লা হাতে মুঠোফোন স্পর্শ না করাই ভালো। প্রায়ই মুঠোফোনে কথা বলার প্রয়োজন হলে ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
হরমোনের সমস্যার কারণে এই অংশে বারবার ব্রণ হতে পারে। মাসিক শুরু হওয়ার আগে প্রাকৃতিক নিয়মে হরমোনের পরিবর্তন কিংবা হরমোননির্ভর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কারণে এখানে ব্রণ হতে পারে। এ জায়গায় ব্রণ হওয়ার ক্ষেত্রে খাবারদাবারেরও ভূমিকা থাকতে পারে। তাই রিফাইনড বা পরিশোধিত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন। যেসব দুগ্ধজাতীয় পণ্যে হরমোন যোগ করা থাকে, সেসব এড়িয়ে চলুন।
শতভাগ ক্ষেত্রেই ব্রণের অবস্থান দেখে এর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এর সঙ্গে আরও বিষয় জড়িত থাকতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনধারার নানান দিক মেনে চলার পরও বারবার ব্রণ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন অবশ্যই।
সূত্র: হেলথলাইন