ব্রণ সমস্যার সমাধান থেকে হৃদ্রোগের ঝুঁকি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি বৃদ্ধি, মানসিক স্থিতিশীলতা, স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের মতো সমস্যার জন্য অনেকেই যোগব্যায়ামে সমাধান খোঁজেন। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি জীবনের গুণগত মান উন্নত করার জন্য যোগব্যায়ামের বিকল্প খুব কমই আছে। সাধারণ যোগব্যায়ামের পাশাপাশি আজকাল নতুন ধরনের যোগচর্চা চোখে পড়ছে। কয়েক দশক ধরেই জনপ্রিয়তায় মিউজিক্যাল যোগব্যায়াম। সেই তুলনায় লিরিক্যাল যোগব্যায়ামের ধারণা নতুন। আজ যোগাসনের এই দুটি ধরন সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
মিউজিক্যাল যোগব্যায়াম
বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়ামের ভেতর অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পাওয়া একটা যোগব্যায়ামের ধরন হলো মিউজিক্যাল ইয়োগা। এর ভেতর দিয়ে একদিকে যেমন যোগব্যায়ামের সুফল পাওয়া যায়, একই সঙ্গে মেলে মিউজিক থেরাপিও।
উত্তর ভারতের বিনয় খুরানা দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন যোগব্যায়ামের সঙ্গে। ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের ঋষিকেষে তাঁর একটি স্কুলও আছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। যোগাযোগ করা হলে বিনয় বলেন, ‘মিউজিক আমাদের মন, মস্তিষ্কের খুবই কাছের। মিউজিক্যাল ইয়োগা আমাদেরকে শান্ত করে। মনোযোগী আর সৃজনশীল করে। হতাশা থেকে বের হতে সাহায্য করে। যদি জানতে চান কীভাবে? তাহলে বলব, আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন সিস্টেমকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যাতে সুখের হরমোন, সৃজনশীলতার হরমোন—এ রকম ইতিবাচক অনুভূতি ও সংবেদনশীলতা তৈরির জন্য দায়ী হরমোনের নিঃসরণকে প্রভাবিত করে।’
কীভাবে কেউ বাড়িতেই মিউজিক্যাল যোগব্যায়াম করতে পারবেন? বিনয় জানালেন, এর চেয়ে সহজ কাজ নাকি দুনিয়াতে আর নেই! বললেন, ‘আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত এটা করি। কেউ ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু করে মিউজিক দিয়ে। আবার কেউ বৃষ্টির দিনে বারান্দায় মিউজিক ছেড়ে দিয়ে আনমনে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্মৃতির অলিগলি ঘেঁটে বেড়ায়। এসবই কিন্তু মিউজিক্যাল যোগব্যায়ামের অংশ। মিউজিকের শক্তির কারণেই আমরা প্রেমে পড়লে বা প্রেম ভেঙে গেলে মিউজিকের কাছেই ফিরে ফিরে আসি। যোগব্যায়ামকে মিউজিকের সঙ্গে জুড়ে দিলেই হয়ে গেল মিউজিক্যাল যোগব্যায়াম।’
এখানে মূলত লিরিক ছাড়া কেবল মিউজিক প্লে করা হয়। যে ধরনের মিউজিক আপনাকে শান্ত করে, নির্মল আনন্দ দেয়, এ রকম কিছু আপনি বেছে নিতে পারেন।
লিরিক্যাল যোগব্যায়াম
এক দশক ধরে মিউজিক্যাল ইয়োগার পাশাপাশি আরও একটি নাম উচ্চারিত হচ্ছে, লিরিক্যাল ইয়োগা। এটি অনেকটা গানের বা মিউজিকের তালে তালে নাচের ভঙ্গিতে যোগব্যায়াম করা। তবে এখানে লিরিক বা গানের কথা উপস্থিত। এর মাধ্যমে আপনি একই সঙ্গে মিউজিক, নাচ আর যোগব্যায়ামের সুফল পেতে পারেন। এ যেন একের ভেতর তিন!
২০২৪ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুর নৃত্যশিল্পী ও যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক দীপ্তি মার্তোলিয়া এ ধরনের যোগব্যায়ামের প্রবর্তক। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে কনটেম্পোরারি নাচ ও যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসনকে মিউজিকের তালে তালে মিলিয়ে করা হয় লিরিক্যাল যোগব্যায়াম। এর ফলে শরীরের গতিবিধি হয়ে ওঠে আরও সহজ, সুন্দর, স্বাচ্ছন্দ্য। ১০ বছর ধরে দীপ্তি লিরিক্যাল যোগব্যায়াম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আর এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছেন।
নিজের ইনস্টাগ্রামের পিন পোস্টের ভিডিওতে দীপ্তি বলেন, ‘আমি নাচের ভেতর নিজেকে হারাই আর লিরিক্যাল যোগব্যায়ামের ভেতর নিজেকে খুঁজে পাই। এটা আমার কাছে নিজেকে সর্বোচ্চ সুস্থ আর ফিট রাখার একটা প্রক্রিয়া। কেবল শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও এই যোগব্যায়ামের মাধ্যমে আমি ভারমুক্ত হই। মিউজিক, শ্বাসপ্রশ্বাস আর শরীরের নড়াচড়ার ভেতরকার ভারসাম্যের মাধ্যমেই আমি সব সমস্যার সমাধান খুঁজি। কেননা এ সময় শরীর, মন আর মস্তিষ্কের সমন্বয়ে অনেক কিছুই সম্ভব হয়ে ওঠে।’