একটি শিশু মাতৃগর্ভে স্ফুরণের পর থেকেই তার বৃদ্ধি শুরু হয়। যা চলতে থাকে পূর্ণাঙ্গ বয়স প্রাপ্তি পর্যন্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর শরীরে নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন হতে থাকে।
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বয়ঃসন্ধির আগমন; যা শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করতে সহায়তা করে। সাধারণত মেয়েশিশুদের ৮ থেকে ১৩ বছর ও ছেলেশিশুদের ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সে এই পরিবর্তন হয়।
যদি কোনো মেয়ের ৮ বছর ও ছেলের ৯ বছর বয়সের আগে এই পরিবর্তন দেখা দেয়, তখন একে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘আগাম বয়ঃসন্ধি’ বলে। সামগ্রিকভাবে এই সমস্যা মেয়েশিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
মেয়েদের স্তন ও ছেলেদের অণ্ডকোষ বড় হওয়ার মধ্য দিয়ে বয়ঃসন্ধির আগমন নির্দেশিত হয়। ক্রমান্বয়ে শরীরের বিশেষ স্থানে লোম গজানো, জননাঙ্গের বৃদ্ধি এবং ঋতুস্রাবের মধ্য দিয়ে মেয়েদের বয়ঃসন্ধি পূর্ণতা পায়। গড়পড়তায় ১০ বছরে মেয়েদের ও ১১ বছরে ছেলেদের এই পরিবর্তন শুরু হয়।
তবে দেশ, জাতি, পরিবেশ, সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তি বিশেষের শরীরগত বৈশিষ্ট্যের তারতম্যে এই সময়ের সীমা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। উন্নত দেশে এবং সামগ্রিকভাবে যাদের আর্থসামাজিক অবস্থা ভালো, এককথায় পুষ্টির প্রভাবে যেসব শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি অন্যদের তুলনায় বেশি, তাদের আগাম বয়ঃসন্ধির সম্ভাবনা বেশি। জাতি হিসেবে আফ্রিকানদের মধ্যে আগাম বয়ঃসন্ধির প্রবণতা বেশি। তাই কোনো কোনো আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সংগঠন মেয়েদের বয়ঃসন্ধির আগমনের বয়স কমিয়ে সাত বছর করার দাবি করছে।
বয়ঃসন্ধির আরেকটি লক্ষণ দ্রুত লম্বা হওয়া। তাই কোনো শিশু স্বাভাবিক বয়ঃসন্ধির বয়সের আগেই যদি সমবয়সীদের চেয়ে দ্রুত লম্বা হতে থাকে অথবা ওপরে উল্লিখিত বয়ঃসন্ধির কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তখনই আগাম বয়ঃসন্ধি সন্দেহ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আগাম বয়ঃসন্ধি মূলত দুই ধরনের। তবে যে কারণেই হোক না কেন, মূল সমস্যা হলো সেক্স হরমোনের আগাম নিঃসরণ। একটির কারণ হতে পারে হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থির জন্মগত কোনো সমস্যা, মাথায় টিউমার, ইনফেকশন কিংবা আঘাতজনিত জটিলতা এবং দীর্ঘদিনের থাইরয়েডজনিত সমস্যা যথাসময়ে বা পরিপূর্ণ চিকিৎসা না করার কারণে।
অন্যটির কারণ অণ্ডকোষ, ডিম্বাশয় বা এডরেনাল গ্রন্থির টিউমার, জননাঙ্গের অস্পষ্টতা বা অন্য কোনো সমস্যা থেকে আগাম ও অতিমাত্রায় সেক্স হরমোন নিঃসরণ হওয়া। এ ছাড়া নির্ণয়যোগ্য কোনো কারণ ছাড়াও আগাম বয়ঃসন্ধির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয় ও রোগের কারণ অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা, শারীরিক মূল্যায়ন ছাড়া রক্তে হরমোনের মাত্রাসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। গতানুগতিক বয়সের চেয়ে শিশুর হাড়ের বয়সের সঙ্গে আগাম বয়ঃসন্ধির সম্পর্ক, কারণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই চিকিৎসকেরা এসব ক্ষেত্রে হাড়ের বয়স নির্ণয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন।
দেশেই ওষুধ প্রয়োগে বয়ঃসন্ধির চিকিৎসা সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল