মোটামুটি সব ফলেই নানা পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেলেও আপেলের সুখ্যাতির পেছনে কারণ আছে
মোটামুটি সব ফলেই নানা পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেলেও আপেলের সুখ্যাতির পেছনে কারণ আছে

যে ৫ উপায়ে চিকিৎসক দূরে রাখে আপেল

কথায় আছে, চিকিৎসক দূরে রাখতে প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু এত ফল থাকতে আপেল কেন? মোটামুটি সব ফলেই নানা পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেলেও আপেলের এই সুখ্যাতির কারণ হলো, পুরো বছরই এর সহজলভ্যতা আর এতে বিদ্যমান নানা পুষ্টি উপাদান। একটি বড় আকারের আপেলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ।

বিভিন্ন গবেষণায় ইতিমধ্যে এটি প্রমাণিত যে প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার আছে অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। চিকিৎসক দূরে রাখতে আপেলের পাঁচটি গুণের কথা জানালেন দুই মার্কিন পুষ্টিবিদ মিয়া সিন ও অ্যালিসা বোস।

১. পরিপাক সহজ করে আপেল
প্রতিদিন নিয়ম করে একটি আপেল খাওয়া পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো, জানান পুষ্টিবিদ এবং ‘মোস্টলি প্ল্যান্ট-বেসড’ বইয়ের লেখক মিয়া সিন। তিনি জানান, আপেলে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি, যা খাবার হজমে বেশ সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রিবায়োটিক আপেলের একটি বিশেষ ধরনের আঁশ পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে। এতে হজম সহজ হয়, পরিপাকতন্ত্রও সুস্থ থাকে। সেন্ট্রাল ওহাইও প্রাইমারি কেয়ারের পুষ্টিবিদ অ্যালিসা বোস জানান, খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করার পাশাপাশি আপেলে বিদ্যমান আঁশ কোষ্টকাঠিন্যও দূর করে।

২. কোলেস্টেরল কমায় আপেল
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপেলের সরাসরি যোগ রয়েছে। লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) হলো অত্যন্ত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, রক্তে যেটির পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ, হার্ট অ্যাটাক, এমনকি স্ট্রোকও হতে পারে। আপেল এই এলডিএল কমাতে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি দিনে অন্তত দুটি আপেল খান, তাঁদের রক্তে এলডিএলের পরিমাণ অত্যন্ত কম। তাঁদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও অন্যদের তুলনায় অনেক কম।

৩. ওজন কমায় আপেল
যদি উদ্দেশ্য হয় দ্রুত ওজন কমানো, তাহলে দিনে মাত্র একটি আপেল আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। সিন বলেন, আপেলে আঁশ বেশি থাকায় এটি সহজে ক্ষুধা কমাতে সক্ষম। বিশেষ করে ডায়েটের ক্ষেত্রে ওজন কমানোর জন্য নির্দেশিত নানান খাবার না খেতে পারলেও নিয়ম করে আপেল খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নারী ওটস বিস্কুট খেয়ে ১২ সপ্তাহে যে ওজন কমিয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি কমিয়েছেন প্রতিদিন তিনটি আপেল (অথবা নাশপাতি) খেয়ে।

আপেল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

৪. ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম আপেল
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষণা মোতাবেক, আপেল খাওয়ার সঙ্গে বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যাওয়ার একটা সম্পর্ক আছে। এই ফলে বিদ্যমান প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরকে নানা রকম মৌলিক ক্ষয়–ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। আপেলের কুয়েরসেটিন নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরে প্রদাহ কমায়, বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।

৫. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় আপেল
প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত ফল আপেল। তারপরও এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। উল্লেখিত কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ১০ হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত আপেল খান, তাঁদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে অনেকটাই কম।

আপেল–ডোনাট

যে উপায়ে আপেল খাওয়া যায়
প্রতিদিন একভাবে আপেল খেতে কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। তাই আপনি যদি নিয়মিত আপেল খাওয়ার পণ করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে পুষ্টিবিদদের অনুমোদিত বেশ কিছু পন্থা, যেগুলো অনুসরণ করে প্রতিদিন আপেল খেতেও একঘেয়ে লাগবে না এবং আপেলের সব পুষ্টিগুণও বজায় থাকবে।
সকালের খাবারে ওটস, দই কিংবা সালাদের সঙ্গে ছোট ছোট করে আপেল কেটে মিশিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মিয়া সিন। আপেল দিয়ে তৈরি মজাদার একটি খাবারের প্রস্তুত প্রণালি দিয়েছেন তিনি—দারুচিনি দিয়ে আপেল বেক করে খুব মজাদার মিষ্টান্ন তৈরি করা যেতে পারে। প্রথমে আপেল টুকরা করে কেটে নিয়ে ট্রেতে রেখে তার ওপর দারুচিনির গুঁড়া ছিটিয়ে দিতে হবে। ইলেকট্রিক ওভেনে ৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ২০ মিনিট বেক করতে হবে। এর ভেতর ১০ মিনিট পর ট্রে বের করে উল্টে দিতে হবে।
স্যান্ডউইচের সঙ্গে আপেল খেতেও বেশ মজা। সুষম খাদ্যতালিকায় আপেল যোগ করতে চাইলে কোনো আমিষসমৃদ্ধ খাদ্যের সঙ্গে আপেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অ্যালিসা বোস। যেমন বাদামের মাখন অথবা মিশ্র বাদাম, গ্রিক দই ইত্যাদির সঙ্গে আপেল খাওয়া যেতে পারে।

আপেল–ডোনাটের রেসিপি দেখুন এখানে