ডিস্ক হার্নিয়েশনের লক্ষণ ও চিকিৎসা

অনেককে বলতে শোনা যায়, তাঁর মেরুদণ্ডের হাড় সরে গেছে। আসলে হাড় নয়, মেরুদণ্ডের কশেরুকার মধ্যবর্তী নরম ডিস্ক নানা কারণে সরে যেতে পারে। ফলে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। একে বলে ডিস্ক হার্নিয়েশন।

আমাদের মেরুদণ্ডে ৩৩টি কশেরুকা রয়েছে। এসব কশেরুকা পরস্পরের ওপর উল্লম্বভাবে সজ্জিত থাকে। দুটি কশেরুকার মধ্যে অস্থিসন্ধিতে থাকে গোলাকার চাকতির মতো একটি অংশ।

এগুলোকে ডিস্ক বলা হয়। এসব ডিস্ককে কশেরুকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে অ্যান্টেরিয়র লঙ্গিটিউডিনাল লিগামেন্ট, পস্টেরিয়র লঙ্গিটিউডিনাল লিগামেন্ট। কোনো কারণে পস্টেরিয়র লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডিস্ক নিউক্লিয়াস স্পাইনাল ক্যানালে বেরিয়ে আসে, একে বলা হয় ডিস্ক হার্নিয়েশন বা স্লিপড ডিস্ক।

ডিস্ক হার্নিয়েশনের লক্ষণ

ডিস্ক হার্নিয়েশনের ব্যথা সাধারণত শরীরের এক দিকে হয়। মেরুদণ্ডের লাম্বার অংশের (পিঠের নিচের দিক) স্লিপ ডিস্কের সাধারণ উপসর্গগুলো হচ্ছে—পিঠে ব্যথা, শরীর বাঁকানোর সময়ে তীব্র ব্যথা, বসা অথবা নড়াচড়ার সময় হঠাৎ ব্যথা, পায়ে ব্যথা। একটি পা বা একটি হাতে অসারতা।

ব্যথা পা বেয়ে নিচের দিকে যায়। নিতম্ব এলাকায় বা কাফ পেশি বা পায়ের তলায় ব্যথা অনুভব। ডিস্ক হার্নিয়েশনের অবস্থান মেরুদণ্ডের সারভাইকাল এলাকায় হলে ঘাড়ে ও হাতে ব্যথা অনুভব হয়। একই সঙ্গে আঙুলে রিনরিন অনুভব হয়।

ডিস্ক হার্নিয়েশন মূলত বয়সজনিত রোগ। মেরুদণ্ডসংলগ্ন পেশি দুর্বল থাকলে বা বেশি বয়সে হাড় ক্ষয়ে পেশি দুর্বল হওয়ায় সামান্য চাপ পড়লেই ডিস্ক স্থানচ্যুত হতে পারে। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা এই সমস্যায় পড়তে পারেন। এতে মেয়েদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন। কোনোভাবে আঘাত পাওয়া, টানা ডেস্কে বসে কাজ বা ভারী জিনিস তুলতে হয়—এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ডিস্ক হার্নিয়েশনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এই রোগের আরেকটি ঝুঁকি ওবেসিটি বা বাড়তি ওজন।

চিকিৎসা

সাধারণ ব্যথা হলে চিকিৎসকেরা চিরাচরিত প্রথায় চিকিৎসা করেন। যাঁদের হার্নিয়েশন চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়নি, তাঁদের কিছুদিন বিশ্রাম, কিছু ব্যায়াম, শক্ত বিছানায় ঘুমানো, নিচু হয়ে ভারী কিছু না তোলা ও ভারী কাজ না করা, পাতলা বালিশে ঘুমানো, বিছানা থেকে ওঠার সময় কাত হয়ে ওঠা, অতিরিক্ত ভ্রমণ পরিহার, মোটরসাইকেল না চালানোর মতো কিছু বিষয় অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবে মারাত্মক স্লিপড ডিস্ক, মাংসপেশি ও স্পাইনাল কর্ডের চূড়ান্ত দুর্বলতা (মায়ালোপ্যাথি) থাকলে অস্ত্রোপচারের কথা ভাবা হয়। বিশেষ করে রোগীর প্রস্রাব, পায়খানার নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে বা যৌনাঙ্গের নার্ভ ড্যামেজ হলে বা শরীরের কোনো অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে। এই অবস্থাকে বলে কৌডা ইকুইন সিনড্রোম। এটা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অস্ত্রোপচার করতে হয়।

  • অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়