স্তন ক্যানসার সেরে গেলেও আবার ফিরে আসতে পারে

নারীদের স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর অক্টোবর মাসকে বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়। গবেষণা বলছে, দেশে নারীদের ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার আইএআরসির সর্বশেষ গবেষণা অনুসারে, প্রতিবছর ১২ হাজার ৭৬৪ নারী ক্যানসারে আক্রান্ত হন। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ধাপে ধরা পড়লে এবং সময়মতো সঠিক ও পূর্ণ চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ ক্যানসার রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব।

সমস্যা হলো, অনেক সময় স্তন ক্যানসার সেরে যাওয়ার পাঁচ-সাত বছর পর আবার ফিরে আসতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেট’ বলা হয়। ক্যানসার ফিরে আসা অনেকটাই নির্ভর করে পারিবারিক ইতিহাসের ওপর। সাধারণত তিন রকম জায়গায় ক্যানসার ফিরে আসার শঙ্কা থাকে। প্রথমত, আগের জায়গায় আবার হতে পারে। আবার আগের জায়গার আশপাশে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া রক্তের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ বাহিত হয়ে দেহের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কেন হয় পুনরাবৃত্তি

সেরে ওঠার পর আবার আক্রান্ত হওয়ার কারণ দেহে ক্যানসার কোষের উপস্থিতি বা রয়ে যাওয়া; যা সিটি স্ক্যান বা ম্যামোগ্রাফির মতো পরীক্ষায়ও সহজে ধরা পড়ে না। রোগীর বুঝতে বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সাধারণত প্রথমবার ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার পর তিন-চার বছরের মধ্যেই আবার তা ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। কারও ক্ষেত্রে এই সময়রেখা ১০-১২ বছর।

কী করে বুঝবেন

হঠাৎ স্তনে ব্যথা অনুভব হলে সাবধান হওয়া উচিত। ক্যানসার ফিরে আসার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এটি। বুক, পিঠ, পাঁজরের হাড়ের ভেতর তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা হতে পারে। স্তনের আকারে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন চোখে পড়লে সাবধান হতে হবে। এ ছাড়া নিজের হাতের স্পর্শে মাঝেমধ্যে খেয়াল করুন, স্তনে কোনো ফোলা বা গোটা বা পিণ্ড রয়েছে কি না। তেমন হলে বুঝতে হবে, ক্যানসার ফিরে আসছে। 

ঠান্ডার সমস্যা না থাকার পরও শ্বাস নিতে কষ্ট হলে বা বুকে চাপ অনুভব হলে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, স্তন ক্যানসার সেরে ওঠার পর তা ফুসফুসে ছড়িয়ে যেতে পারে। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের ফলে অনেকে ক্লান্ত থাকেন। এর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার। বিশ্রাম নেওয়ার পরও ক্লান্তি বা দুর্বল অনুভব করলে সেটা স্বাভাবিক নয়। 

মেটাস্ট্যাটিক স্তন ক্যানসার মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। তেমনটা হলে স্নায়ুজনিত সমস্যা হতে পারে। কোনো ঘটনা ভুলে যাওয়া, মাথাব্যথা করা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কী করবেন

প্রথম কথা হলো, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্তন ক্যানসারের পূর্ণ চিকিৎসা করতে হবে। অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দেন, এটা ভয়ংকর। দ্বিতীয়ত, পুরোপুরি সেরে ওঠার পরও বা সুস্থ হওয়ার পরও নির্দিষ্ট সময় পরপর চিকিৎসকের চেকআপে থাকতে হবে।

অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা