বছরের শুরুতে নতুন ক্লাসে নতুন বই নিয়ে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, সে এক অন্য রকম আবেগ। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতায় সময়টা পৌষ মাস, কয়েক দিন পরেই আসছে মাঘ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, সামনের দিনগুলোয় শীত আরও বাড়তে পারে। কিন্তু স্কুল খোলা থাকলে তো শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে উপায় নেই। তাই অভিভাবকদের এ সময় নিতে হবে বিশেষ সতর্কতা।
শীতের সকালে
শীতের সময় শিশুদের স্কুলে পাঠাতে গিয়ে প্রথম যে ঝামেলায় অভিভাবককে পড়তে হয়, তা হলো সকালে তাকে তৈরি করা। এ জন্য রাতেই শিশুর পোশাক ও ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে হবে। তাকে ঘুম থেকে তুলে হাত-মুখ ধুতে কুসুম গরম পানি দিন। সকালের নাশতায় ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ ও ভিটামিন সি আছে, এমন ফলের রস দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে দেওয়া যেতে পারে। টিফিনে দেওয়া যেতে পারে সবজির পাকোড়া, সবজির রোল। এতে আপনার সন্তান খাওয়ার আগ্রহও পাবে।
পোশাক
স্কুলগামী শিশুদের ক্ষেত্রে পোশাকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সকালে শীতের প্রকোপ একটু বেশি, তাই স্কুলের ড্রেসের ওপর অতিরিক্ত একটি শীতের পোশাক পরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে ভেতরে একটা গরম ফুলহাতা গেঞ্জি পরানো যায়। এতে স্তরে স্তরে তাপ উৎপন্ন হবে। শীতের বাতাস থেকে গলা আর কানকে বাঁচাতে ব্যবহার করতে হবে মাফলার ও টুপি। পায়ে জুতার সঙ্গে মোটা মোজা। অনেক স্কুলের ক্ষেত্রে স্কুলড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে শীতের পোশাক নির্ধারিত থাকে।
শিশুদের গরম পোশাকটি যেন খুব বেশি ভারী না হয়, সেটা দেখতে হবে। শীতের শুষ্ক বাতাসে ধুলাবালু বেশি থাকায় তা শিশুর উলের পোশাকে আটকে থেকে হতে পারে ‘ডাস্ট অ্যালার্জি’। তাই নিয়মিত গরম পানি দিয়ে পোশাক পরিষ্কার করা জরুরি। আর শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করে খেলাধুলা করতে থাকে, ভারী পোশাকে তার ঘেমে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সে ক্ষেত্রে বলতে হবে ওপরের গরম পোশাকটি যেন সে খেলার সময় খুলে নেয়, ভেতরের স্তরগুলো থাকবে।
রাস্তায় সতর্ক থাকুন
শীতের সকালে ঘন কুয়াশায় অনেক সময় রাস্তাঘাট দেখা যায় না। অনেক শিশুই স্কুলের যানবাহনে যায়, কেউ আবার অভিভাবকের সঙ্গে। রাস্তায় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য চলাচলের সময় খেয়াল রাখতে হবে, রাস্তা পার হওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
শীতের অসুখ-বিসুখ
শীতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ বেড়ে যায়। এ সময় শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাশি, টনসিল, ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে ভুগতে দেখা যায়। এদের মধ্যে বেশ কিছু রোগ ছোঁয়াচে। স্কুলে যেহেতু অনেকে একসঙ্গে থাকে, তাই সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। আর শীতকালে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানও বেশি হয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় শিশুদের দূরে রাখা উচিত। স্কুলে শিশুদের মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস করাতে হবে। শিশুদেরও হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা শেখানো উচিত। শীতকালে ফ্লুর প্রকোপ বেড়ে যায়। ফ্লুর হাত থেকে বাঁচাতে সম্ভব হলে শিশুদের ফ্লু টিকা দিতে হবে।
এই সময় স্কুলে খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। শিশুদের এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের যেমন সুযোগ দিতে হবে, তেমনই বাসায় আসার পর খেয়াল রাখতে হবে খেলাধুলা করে শিশু কোথাও আঘাত পেয়েছে কি না। সে রকম হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্কুল থেকে ফেরার পর শিশুদের ভালোমতো হাত-মুখ পরিষ্কার করে খাবার দিতে হবে। খাবার যেন ঠান্ডা না থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এই সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যারা প্রথম স্কুল শুরু করে। তাদের অভ্যস্ত করতে হয়। আবার স্কুলে নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু ও নতুন কাজ পেয়ে সবচেয়ে আনন্দও তাদের হয়। এ সময়ে কিছু সতর্কতা নতুন বছরের নতুন ক্লাস সব শিশুর জন্য আনন্দময় করে তুলুক।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর