তেল নিয়ে এই ৬ ভুল ধারণা আপনারও নেই তো

সুস্থ জীবনযাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া। আর স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অনেকটাই খাবারে ব্যবহৃত তেলের ওপর ভর করে আছে। অন্তর্জালে তাই তেল নিয়ে এন্তার তথ্য। যার কোনোটি হয়তো ঠিক, কোনোটি আংশিক সত্য আর কোনোটির কোনো ভিত্তিই নেই। চলুন জেনে নিই, তেল নিয়ে বহুল প্রচলিত ৬টি ধারণা নিয়ে কী বলছেন বিজ্ঞানীরা—

অপরিশোধিত বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের গুণের শেষ নেই

১. রান্না করা অলিভ অয়েল খারাপ

অপরিশোধিত বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের গুণের শেষ নেই। বিশেষ করে হৃদ্‌রোগে এ ধরনের তেল খুবই উপকারী, এমন তথ্য উঠে এসেছে একাধিক গবেষণায়। সালাদ বা রান্না না করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাওয়া ভালো।

কিন্তু এই তেল দিয়ে যদি রান্না করা হয়? অনেকে মনে করেন, সাধারণ তেলের চেয়ে এই তেল দ্রুত ধোঁয়া তৈরি করে, যা নাকি বিষক্রিয়ার লক্ষণ। মোটকথা, এক্সট্রা ভার্জিন তেল দিয়ে রান্না খেলে নাকি ক্যানসার, হৃদ্‌রোগসহ অনেক রোগ বাসা বাঁধতে পারে। ইন্টারনেটে ঢুঁ মারলে এমন অনেক তথ্যই আপনি পাবেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আদতে এমন তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। নতুন একটি গবেষণা বলছে, কাঁচা খাবারের সঙ্গে সালাদ হিসেবে খাওয়ার চেয়ে বরং রান্না করে এক্সট্রা ভার্জিন তেল খাওয়াই বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে রান্নার সময় আঁচ অল্প হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল যত উপকারীই হোক, দিনে ২ থেকে ৪ টেবিল চামচের বেশি খেলে সেটাও হতে পারে ক্ষতির কারণ।

তেলের স্মোকিং পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ

কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় রান্না করা হচ্ছে, তার ওপর তেলের পুষ্টিগুণ অটুট থাকা না-থাকা নির্ভর করে। রান্নায় যত ডিগ্রি তাপমাত্রায় তেলের গুণ নষ্ট হওয়া শুরু হয়, সেটিই স্মোকিং পয়েন্ট।

গবেষণায় দেখা গেছে, অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ৩৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অর্থাৎ এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় তেলটির গুণ নষ্ট হয়ে যায়। সয়াবিন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট ৪৫০ থেকে ৪৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। রাইস ব্র্যান অয়েলের ৪৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শর্ষের তেলের স্মোকিং পয়েন্ট প্রচলিত তেলগুলোর ভেতর সবচেয়ে কম। ২৪৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এটির গুণাগুণ নষ্ট হতে শুরু করে। আর এ কারণেই ডিপ ফ্রাইয়ের ক্ষেত্রে শর্ষের তেল বা অলিভ অয়েল এড়িয়ে যাওয়া হয়। বেশি আঁচে শর্ষে বা জলপাই তেলে রান্না না করাই ভালো।

তেল দামি হলেই যে সেটা স্বাস্থ্যকর হবে, তার কোনো মানে নেই

২. যত দামি তেল, তত স্বাস্থ্যকর

এক্সট্রা ভার্জিন অয়েলের দাম যে বেশি, এ তথ্য কমবেশি সবারই জানা। তবে তেল দামি হলেই যে সেটা স্বাস্থ্যকর হবে, তার কোনো মানে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময়ই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের সঙ্গে অন্যান্য নানা উপকরণ মিশিয়ে বোতলজাত করা হয়। এসব তেলের দাম বেশি হলেও এগুলো স্বাস্থ্যকর নয়।

৩. উদ্ভিজ্জ তেল অস্বাস্থ্যকর

উদ্ভিজ্জ তেল নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা আছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, উদ্ভিজ্জ তেলও স্বাস্থ্যকর, এতে অনেক উপকারী উপাদান আছে। অপরিশোধিত তেল অতিরিক্ত তাপেও নষ্ট হয় না। তাই রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপ নিয়ে তত চিন্তা থাকে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের কিছু খেলে ঘরে খাওয়াটাই ভালো। কারণ, বাইরের খাবারগুলো তৈরির সময় খরচ বাঁচাতে দোকানিরা নিম্নমানের তেল ব্যবহারে করে থাকেন। তাই কী তেল খাচ্ছেন, এর চেয়ে কোথায় খাচ্ছেন, সেটা মাথায় রাখা জরুরি।

তেলের কিছু খেলে ঘরে খাওয়াটাই ভালো। কারণ, বাইরের খাবারগুলো তৈরির সময় খরচ বাঁচাতে দোকানিরা নিম্নমানের তেল ব্যবহারে করে থাকেন

৪. নারকেল তেল খাওয়া ভালো

উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারকেল তেল খাওয়ার চল আছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত আর শ্রীলঙ্কায়। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় নারকেল তেল খাওয়া অস্বাস্থ্যকর। নারকেল তেল নিয়ে আরেকটি প্রচলিত ধারণা, এটা মুখের জন্য ভালো। ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমনও তথ্য পাওয়া যায়, নারকেল তেলে থাকা লরিক অ্যাসিড মুখের খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে দূরে রাখে। তবে বিশ্বাসযোগ্য কোনো গবেষণায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

৫. নারকেল তেলে চুল গজায়

ধারণা করা হয়, নারকেল তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড চুল বাড়তে সাহায্য করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিভেদে তেলের ব্যবহার উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি! চুলে নিয়মিত রং করলে, হিট দিলে বা ক্ষতিকর বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করলে—কেবল এসব ক্ষেত্রে নারকেল তেল উপকারী হতে পারে, অন্যদের ক্ষেত্রে নয়। মোটাদাগে বলা যায়, নারকেল তেল যে আসলেই চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর, এটা কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি।

৬. তেলে ব্রণ সারে

অনেকেরই ধারণা, চুলের মতো ত্বকে তেল ব্যবহার ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। ত্বকে তেল ব্যবহারে ব্রণ ঠিক হয়, এমন ধারণাও প্রচলিত আছে। তবে গবেষণা বলছে, এমন ধারণা সত্যি নয়। নারকেল তেলের লরিক অ্যাসিডের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই এটি ত্বকে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কমায় বলে অনেকের ধারণা। সত্যিটা হলো, নারকেল তেল ব্রণ আরও বাড়াতে পারে! বিশেষ করে যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত।


তথ্যসূত্র: টাইম