সবাই চান ওজন যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। আর এই কারণে নানা পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করেন মানুষ। অনেকে চান খুব অল্প সময়ে অতিরিক্ত ওজন থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে। তাই কেউ ক্রাশ ডায়েট করেন, কেউ কিটো, কেউ করেন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, কেউবা মিলিটারি ডায়েটের শরণাপন্ন হন। কিন্তু নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে খুব দ্রুত ওজন কমানো হলে আখেরে ফলাফল ভালো কিছু হতে পারে না। আর বিশেষ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে হবে; কারণ, সব ডায়েট সবার জন্য নয়। গুগল ঘেঁটে বা অন্যের কথা শুনে যেকোনো ডায়েট অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েন।
স্বাভাবিকভাবে কোনো জটিলতা ছাড়াই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ সপ্তাহে আধা কেজি বা মাসে দুই থেকে তিন কেজি ওজন কমাতে পারেন। কখনো স্বাস্থ্যগত বা পেশাগত কারণে খুব দ্রুত ওজন কমানো প্রয়োজন হলে তা একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ক্যালরি মেপে পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ আর প্রচুর তরল খাবারের সঙ্গে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম। সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম এবং দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপন। অতি দ্রুত অস্বাভাবিক উপায়ে ওজন কমানো হলে নানা সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন
দ্রুত ওজন কমলে শরীরে পানিশূন্যতা বা পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে।
ত্বক বা চুলের ক্ষতি হয়, চুল অত্যধিক পড়ে যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ কিংবা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বেড়ে যায়।
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
রক্তে শর্করার বিপাক বা বা কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে, তা থেকে হৃদ্যন্ত্র বা মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
খাবারে আমিষ শর্করার ভারসাম্য না থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মনোযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরেকটি ব্যাপার হলো, যাঁরা দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, তাদের ওজন কমলেও তা আবার দ্রুতই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মানে তাঁদের এই ওজন হ্রাসের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
তাই ওজন কমাতে হবে ধীরেসুস্থে, সময় নিয়ে। এ জন্য খুব অস্থির হয়ে লাভ নেই। এর কোনো সরলসোজা বা সংক্ষিপ্ত পথও নেই। এমন কোনো খাবারও নেই, যা খেলে অনায়াসে ওজন কমে। ওজন কমানো একটি দীর্ঘমেয়াদি আয়াসসাধ্য অভ্যাসের ফল। আজকাল ভার্চ্যুয়াল জগতে নানা বিজ্ঞাপনের হাতছানি দেখা যায়, কিন্তু যাচাই–বাছাই না করে এই সব উপকরণ গ্রহণের কারণে দীর্ঘমেয়াদি অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে অনলাইনে অনেক অনভিজ্ঞ ব্যক্তি ওজন নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন বা খাদ্যতালিকা করে দেন। প্রয়োজন হলে একজন মেটাবলিজম–বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের মতামত নিয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করা ভালো। টার্গেট ঠিক করুন এবং ছয় মাসের মতো সময় নিন। পুষ্টির বিষয়ে আপস না করে বাড়তি এবং মন্দ খাবার বর্জন করুন। শুধু ডায়েটের মাধ্যমে ওজন না কমিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটার চেষ্টা করুন, তাতে ওজন কমবে। সময় নিয়ে ওজন কমানো হলে তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তেমনি শারীরিক জটিলতা থেকেও মুক্ত থাকা যায়।
ডা. শাহনূর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ