হেঁচকি যাচ্ছে না?

হেঁচকি বা হিক্কার সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। জীবনে কখনো হেঁচকি হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা একটা কষ্টকর ও বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা। বেশির ভাগ সময় হেঁচকি উঠে কিছুক্ষণ পর এমনিতেই চলে যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে হেঁচকি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিশেষ করে কিছু কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এটা একটা সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। কিন্তু কেন হয় হেঁচকি? এটি থামানোর উপায়ই-বা কী?

বেশির ভাগ সময় কিছু উপায়ে হেঁচকি বন্ধ করা যায়
ছবি: সংগৃহীত

যে কারণে হেঁচকি ওঠে

বুক ও পেটের মধ্যে যে বক্ষচ্ছদা বা ডায়াফ্রাম আছে, তাতে সমস্যা হলে হিক্কা হয়। বক্ষচ্ছদানিয়ন্ত্রক ফ্রেনিক নার্ভ বা ভ্যাগাস নার্ভে কোনো সমস্যা হলে হিক্কা উঠতে পারে। শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হতে পারে বেশি। হেঁচকির কারণ সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে কিছু অসতর্কতা। যেমন তাড়াহুড়া করে খাওয়া, দ্রুত ঢকঢক করে পানি পান, খাওয়ার সময় কথা বলা বা অন্যদিকে মনোযোগ, অ্যালকোহল সেবন। তা ছাড়া জোরে হাসা, হঠাৎ ভয় পাওয়া, আবেগ, উত্তেজনা ইত্যাদি কারণেও হেঁচকি উঠতে পারে। কিছু অসুখের কারণেও এটা হতে পারে। যেমন পাকস্থলী বা খাদ্যনালির কোনো প্রদাহ, ফুসফুসের আবরণীতে প্রদাহ, কিডনি সমস্যা, যকৃৎ বা প্যানক্রিয়াসের কোনো রোগ।

কী করবেন

বেশির ভাগ সময় কিছু উপায়ে হেঁচকি বন্ধ করা যায়। যেমন—

  • জোরে শ্বাস নিয়ে যতক্ষণ পারা যায় বন্ধ রেখে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। বেশ কয়েকবার এটা করতে হবে। বিরতি দিয়ে বারবার করতে হবে।

  • একটা কাগজের ব্যাগে নাক–মুখ ঢেকে জোরে শ্বাস নিতে হবে এবং ওই ব্যাগের মধ্যেই ছাড়তে হবে। বেশ কয়েকবার করুন। তবে সাবধান, পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করবেন না।

  • নাক–মুখ বন্ধ রেখে জোর করে নিশ্বাস ফেলতে চেষ্টা করুন, দুই কর্ণকুহরে চাপ পড়বে। এটাকে বলে ‘ভালসালভা ম্যানুভার’। কয়েকবার করুন। উপকার পাবেন।

  • ঠান্ডা পানি পান করতে পারেন। অথবা গরম দুধ। এক চামচ চিনি জিবে নিয়ে সামান্য সময় পর গিলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। নাক চেপে ধরে পানি পান করতে পারেন।

  • গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন।

দুই দিনের মধ্যে হেঁচকি ভালো না হলে একজন পরিপাকতন্ত্র ও লিভার–বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিসিন–বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

*ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।