অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি স্নায়ুর বিকাশজনিত প্রতিবন্ধকতার একটি অবস্থামাত্র। এর মাত্রা মৃদু থেকে তীব্র পর্যন্ত হয়ে থাকে। শুরুতেই সচেতন না হলে এর মাত্রা গুরুতর আকার ধারণ করে। অটিজমের প্রতিবন্ধকতা মূলত তিন ধরনের:
১. সামাজিক প্রতিবন্ধকতা।
২. যোগাযোগের সমস্যা, মৌখিক ভাষা ও ইশারা ভাষার সমস্যা।
৩. আচরণগত সমস্যা।
আসুন জেনে নিই কোন বয়সে কী কী আচরণ দেখলে আমরা অটিজম বিষয়ে সচেতন হব।
জীবনের শুরুতেই যে বিষয়গুলো লক্ষ করবেন—
জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলে প্রতি–উত্তরে যদি না হাসে।
ছয়-সাত মাসে ‘বা বা’, ‘মা মা’, ‘দা দা’, ‘কা কা’ ইত্যাদি শব্দ না করে।
চোখের দিকে চোখ না রাখে।
১২ থেকে ২৪ মাস বয়সের শিশুদের মধ্যে যে বিষয়গুলো লক্ষ করবেন—
কোনো জিনিস নির্দেশ করতে না পারা বা আগ্রহ প্রদর্শন না করা।
‘বা বা’, ‘দা দা’, ‘কা কা’ ইত্যাদি শব্দ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়া।
অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারা বা চেষ্টা না করা।
নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া।
চোখের দিকে না তাকানো।
শরীরের পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া—শরীর দোলানো, মাথা দোলানো ইত্যাদি।
ছোট্ট শিশুটি যদি হাসির বিনিময়ে না হাসে।
১৬ মাস বয়সে একটি শব্দ তৈরি করতে না পারা।
২৪-৩৬ মাস বয়সের শিশুদের মধ্যে যে বিষয়গুলো লক্ষ করবেন—
একা একা খেলা অর্থাৎ নিজে নিজে খেলা।
অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলনা ভাগাভাগি না করা।
নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া।
অনুকরণ করে খেলা বুঝতে না পারা।
অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারা।
জড়িয়ে ধরতে অনাগ্রহ।
মা-বাবার প্রতি অনাগ্রহ দেখালে।
উল্লিখিত যেকোনো বিষয়ে আপনার সন্দেহ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অটিজম কি না জানতে কোথায় যাবেন
সরকারি বড় মেডিকেল কলেজগুলোতে শিশু বিকাশকেন্দ্র রয়েছে। এরা আপনার শিশুর বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। শিশুর স্নায়ুর বিকাশ বিষয়ে অভিজ্ঞ শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সঠিক রোগ শনাক্তকরণ আবশ্যক। তা ছাড়া এদের উন্নয়নে হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ বা সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার হয়। ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রয়োজন পারিবারিক সাহচর্য।
ডা. অজন্তা রানী সাহা: সহযোগী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্নায়ুবিকাশ প্রতিবন্ধী ও ডাউন সিনড্রোম বিশেষজ্ঞ