পরপর দুই সন্তানের মা হওয়ার কারণে অভিনয়ে দীর্ঘ বিরতি পড়ে যায়। আবারও অভিনয়ে ফিরতে চাইছিলেন শার্লিন ফারজানা। তখনই ওজন নিয়ে কথা শুনতে হচ্ছিল। সহকর্মীরা কেউ কেউ বলছিলেন, ‘আগে ওজন কমিয়ে তারপর আসুন।’ শুনে শুরুতে বেশ হতাশ হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। ভেবেছিলেন শুটিংয়ের মাধ্যমে ওয়ার্ক আউট করে ওজন কমাবেন। তা আর হলো না। তবে হতাশা থেকেই মনে জেদ চেপে গেল। তবে ১১৪ কেজি ওজন থেকে সেই আগের ৫০ কেজিতে কীভাবে ফিরে আসা সম্ভব, এটা হয়ে দাঁড়াল ভাবনার মূল বিষয়।
হা–হুতাশ করা ছাড়া ওজন কমানোর কোনো উপায় পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে তাঁর হাঁটুর নিচে ব্যথা করতে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে তেমন কোনো অসুবিধা পেলেন না। তবে সতর্ক করে দিলেন শারীরিক ওজন নিয়ে। ওজন কমাতেই হবে।
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘পরপর দুই সন্তান হওয়ার কারণে ওজন অনেক বেড়ে যায়। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার আগের সময়টা প্রচুর খেয়েছি। বাসা থেকে খুব বেশি বের হইনি। অনেক আরাম করেছি। আমাদের বাসায় অনেক আইটেম দিয়ে খাওয়ার প্রচলন। এভাবেই বাড়তে থাকে ওজন। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ হওয়ায় আরও বুঝতে পারিনি যে এতটা ওজন বাড়ছে।’
এ ছাড়া ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার পর দীর্ঘ বিরতি নেন শার্লিন। চার বছরের বিরতি শেষে অভিনয়ে ফেরার আগে শার্লিনকে ওজনের বিষয়ে সতর্ক করেন স্কুলের বন্ধুবান্ধব থেকে সহকর্মী ও পরিবারের অনেকে। তাঁরা বলেন যে ‘ওই’ লুকে অভিনয় করলে বডি শেমিংয়ের শিকার হতে পারেন। এ জন্য আগেই স্বাভাবিক ওজনে ফেরা উচিত। কেই কেউ বলিউড তারকাদের উদাহরণও টানেন।
শার্লিন বলেন, ‘ওজন কমানো নিয়ে আমি রুনা (খান) আপার সঙ্গেও কথা বলেছি। এ ছাড়া আমার বান্ধবী লামিয়া চৌধুরী (অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির একমাত্র কন্যা) একদিন আমার মন খারাপ দেখে পার্কে ডাকে। গিয়ে দেখি সে একের পর এক রাউন্ড দিচ্ছে। সেসহ আরও কয়েকজন ওজন কমিয়ে কাজে ফেরা অভিনেত্রীদের কথা জানায়। বলে যে আলিয়া ভাট, কারিনা কাপুর, সোনম কাপুর ওরাও মা হয়েছে। পরে ওজন কমিয়ে দিব্যি কাজে ফিরেছে। তাহলে আমি কেন পারব না?
আগে ৫০ কেজি ওজন থাকলেও কখনোই নিয়ম করে জিম করেননি। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেন। তাতে ওজনও ঠিক থাকত। বাড়ত না। ডাল–ভাত খাওয়া সেই শার্লিন অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে থাকেন। এরপর গত বছর আগস্টে প্রশিক্ষক রেখে বাসাতেই শুরু করেন ওজন কমানোর যুদ্ধ। প্রথম দিন থেকেই শুরু করেন ২০ মিনিট বক্সিং আর ১০ হাজার স্টেপ। পরে তালিকায় যোগ হয় পুশআপ, হ্যান্ড মাসল এক্সারসাইজসহ বেশ কিছু ব্যায়াম। খাবার নিয়ে বাড়তি সতর্কতা তো ছিলই। কেননা খাবারের ওপরই ওজন কমানো নির্ভর করে বেশি। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা—যা খেতেন এই ৮ ঘণ্টার ভেতরে। বাকি ১৬ ঘণ্টা পানি ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। অনেক খিদে পেলে পানির সঙ্গে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতেন। এভাবে প্রথম মাসেই কমে ২০ কেজি ওজন। ফলে সাহস আর অনুপ্রেরণা দুইই মিলে যায়।
খাবারের তালিকায় কী থাকত—জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘চিকেন, ডিম, ব্রকলি, ওটস এই ছিল আমার খাবার। মাঝেমধ্যে অন্য খাবারও খেতাম। হিসাব রাখতে হতো ক্যালরির। নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরির খাবার খেতাম। সেটা বার্ন করে ফেলতাম। শর্করা খুবই কম খেয়েছি। অবেলায়, অনিয়ন্ত্রিত বা অতিরিক্ত খাবার একদম বর্জন করতে হয়।’
পরে টানা আট মাস ওজন কমানোই ছিল ধ্যানজ্ঞান। সহজ ছিল না সেই যাত্রা। শার্লিন বলেন, ‘আমরা ছিলাম ভীষণ ভোজনরসিক। অনেক আইটেম আর রিচ ফুড খেতাম। খাওয়া শুরুই করতাম শাহি পরোটা ও গরুর মাংস দিয়ে। সেখানে এখন বিস্তর পরিবর্তন এসেছে। পরিবার থেকে এই সহযোগিতা না পেলে ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে যেত। আমার স্বামী (প্রকৌশলী ও আইটি বিশেষজ্ঞ এহসানুল হক) আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন।’
এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে বাচ্চা হলে ওজন বেড়ে যায়। কমানো কঠিন। শরীর নিয়ে নারীদের নানা কটু কথা শুনতে হয়। সেগুলো আমি গায়ে মাখি না। তবে আমার মনে হয়েছে, শরীরটা আমার। সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের চর্চাটা ধরে রাখতেই হবে। আবার আগের মতো শরীর নিয়েই কাজে ফিরতে চাই। সুস্থ থাকতে চাই। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে চাই। আমার ওজন এখন ৬৫ কেজি, আগামী এক মাসের মধ্যে আমার টার্গেট, আগের মতো ৫০ কেজিতে ফিরে আসা।’