মাংসপেশির ব্যথা বা মায়ালজিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপ বা ভারী পরিশ্রম করলে, যেমন দৌড়, ম্যারাথন কিংবা অতিরিক্ত ব্যায়ামে মাংসপেশিতে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে। শারীরিক আঘাত, যেমন পড়ে যাওয়া বা দুর্ঘটনায় মাংসপেশিতেও আঘাত লাগে এবং ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘ সময় ভুল দেহভঙ্গিতে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে মাংসপেশিতে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে। মাংসপেশির স্ট্রেন (strain) বা স্প্রেন (sprain) হলেও ব্যথা হতে পারে। টেনশন বা মানসিক চাপে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা হয়।
কিছু সংক্রমণ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু বা অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণ পেশিতে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা লুপাসের মতো অটোইমিউন রোগে মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যথার কারণ হতে পারে, যেমন রক্তে চর্বি কমানোর ওষুধ। আবার শরীরে ইলেকট্রোলাইটের (যেমন পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম) ভারসাম্যহীনতায় ব্যথা হতে পারে।
করণীয়
বিশ্রাম: মাংসপেশিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন। হঠাৎ অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। প্রথম দিনই বেশি ব্যায়াম করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় ও তীব্রতা বাড়াবেন। ব্যায়ামের শুরুতে ওয়ার্মআপ করলে পেশির ওপর চাপ পড়ে কম।
গরম সেঁক: ব্যথার স্থানে গরম সেঁক (হট কমপ্রেস) ব্যবহার করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্যথা কমায়।
বরফ সেঁক: যদি ব্যথা আঘাতের কারণে হয়, তবে প্রথমে বরফ সেঁক দিন। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
স্ট্রেচিং ও ম্যাসাজ: মৃদু স্ট্রেচিং ও ম্যাসাজ মাংসপেশিকে শিথিল ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম মাংসপেশির শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ায়।
পানি ও তরল খাবার: পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন। এটি শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পুষ্টিকর খাদ্য: স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন, যা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে।
ব্যথানাশক ওষুধ: আইবুপ্রফেন, নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম বা পেশি শিথিলকারক ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
ফিজিওথেরাপি: যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অতি তীব্র হয়, সে ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে ব্যথা কমাতে একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।