করোনার সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হোম অফিসের ধারনা। ছোট–বড় সব অফিসই হয়ে উঠেছিল অনলাইনভিত্তিক। ধীরাজের আইটি ফার্মও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ভারতের উত্তরাখন্ডে তাঁর বসবাস। বাকি সব অফিসের মতো ঘরে বসেই নিজের কাজ করছিলেন তিনি। এই হোম অফিসই কাল হয়েছিল তাঁর জন্য। ঘরে বসে থাকতে থাকতে নিজের শরীরের দিকে একেবারেই মনোযোগ দিতে পারেননি। যার প্রভাব পড়েছিল তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও। করোনাকালে গড়ে ওঠা বাজে অভ্যাসগুলো কোনোভাবেই ছাড়তে পারছিলেন না। ধীরাজের এই পরিবর্তন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন তাঁর মা। মায়ের কথায় হুঁশ ফেরে ধীরাজের, শুরু হয় ‘ফ্যাট থেকে ফিট’ হওয়ার লড়াই।
‘ফ্যাট থেকে ফিট’ হওয়ার লড়াই
ধীরাজের লড়াই শুরু হয় মর্নিং ওয়াক দিয়ে। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাঁর লড়াই। ধীরাজের ভাষায়, ‘ওজন কমানোর লড়াইয়ে আমার প্রথম পদক্ষেপ ছিল রুটিনে মর্নিং ওয়াককে প্রাধান্য দেওয়া।’
প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে হাঁটতে বের হতেন ধীরাজ। ধীরে ধীরে হাঁটা বাদ দিয়ে সাইক্লিংয়ে মনোযোগ দেন। প্রতিদিন সকালে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়তেন উত্তরাখন্ডের রাস্তায়। ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল ছবি তোলার। তাই সাইকেলে করে দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করলেন উত্তরাখন্ড আর নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে লাগলেন সকালের নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
ডায়েটে পরিবর্তন
ধীরাজ সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনেন তাঁর ডায়েটে। ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন বদলে দিয়েছিল তাঁর খাদ্যাভ্যাস।
আর্টিফিশিয়াল সুইটনারের পরিবর্তে মধু ও গুড় ব্যবহার করা।
খাবারের সময়ে পরিবর্তন আনা। রাত আটটায় রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যেতেন তিনি।
চা-কফির ওপর থেকে একেবারেই নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন মাত্র এক কাপ কফি খেতেন।
ফাস্ট ফুড ছুঁয়েও দেখেননি।
লড়াইয়ে অটল থাকা
দুই মাসের লড়াইয়ে সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল লড়াইয়ে টিকে থাকা। কিছু কিছু দিন ধীরাজের মনে হতো, লড়াইটা করে কী হবে? আবার নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে উৎসাহ পেতেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। টানা দুই মাস সাইক্লিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে জগিং আর স্ট্রেংথ ট্রেনিং এক্সারসাইজ করতেন তিনি।
সবার সঙ্গে অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি
নিজের শরীরের পরিবর্তন থেকে নিজের লড়াইয়ের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করতে শুরু করেন ধীরাজ। প্রথমে বন্ধু-বান্ধব, পরে অনুসারীদের প্রতিক্রিয়া দেখে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হন। এখন শুধু নিজের লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ নেই তিনি। বরং নিজের ফলোয়ারদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন ওজন কমানোর লড়াইয়ে নামতে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নিজের ওজন কমানোর লড়াইটা এখনই শেষ করতে চান না ধীরাজ। বরং চালিয়ে নিয়ে যেতে চান বহুদূর। জিমে না গিয়ে শুধু নিজের জীবনে ছোট ছোট কয়েকটি পরিবর্তন এনেই নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিশাল পরিবর্তন এনেছেন তিনি। ধীরাজ বলেন, ‘লকডাউন আমাকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বুঝতে শিখিয়েছে। সামান্য কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই সুস্থ-সবল জীবনযাপন করা যায়। আমি চাই, আমার দেখাদেখি কেউ নিজের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনুক।’
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া