মাথাব্যথা এমনিতেই বেশ কষ্টদায়ক, আর মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে তো কথাই নেই। যাঁদের এই সমস্যা আছে, তাঁরাই জানেন মাইগ্রেনের ব্যথা কতটা যন্ত্রণাদায়ক। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা দিয়ে শুরু হয়, সঙ্গে থাকে বমি বমি ভাব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও জটিল সব উপসর্গও দেখা দিতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে বেশির ভাগ মানুষ ঘর অন্ধকার করে বিশ্রাম নিলে বা ঘুমালে কিছুটা আরাম বোধ করতে পারেন। কিন্তু যাঁরা কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হঠাৎ মাথাব্যথা শুরু হলে বিষয়টা ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে।
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, মাইগ্রেনের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। কিছু খাবারদাবার বেছে চললে, জীবনযাপনের কিছু নিয়ম মানলে এই ব্যথার প্রকোপের হার কমানো সম্ভব। কিছু দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনেও কাজ দেয়। তবে তীব্র ব্যথা শুরু হলে অন্ধকার জায়গায় বিশ্রাম নিলে, পর্যাপ্ত তরল খাবার খেলে খানিকটা আরাম বোধ হতে পারেন। এ সময় কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে তাকানো পরিহার করতে হবে। মাথায় ঠান্ডা পানি, বরফ বা ভেজা কাপড় জড়ালেও ব্যথা কমানো যায়। মাথায় ভেষজ তেল বা স্থানীয় ব্যথানাশক মালিশ করেও খানিকটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
অনেকে হালকা গরম চা বা ভেষজ চা খেয়ে আরাম পেতে পারেন। আর ওষুধ তো আছেই। মাইগ্রেনের ব্যথায় প্রথমে ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল বা অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে ডমপেরিডনজাতীয় বমির ওষুধ খেতে পারেন। ব্যথানাশক ও বমির ওষুধ খেলে অনেকেই সুস্থ বোধ করেন। আবার কেউ কেউ এতেও তেমন নিষ্কৃতি পান না, তাদের জন্য আছে ট্রিপটিন গোত্রের ওষুধ, এসব ওষুধ নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর খেলে অনেকের ক্ষেত্রেই বেশ ভালো ফল দেয়।
তবে কারও কারও ব্যথা বেশ জটিল হয়, কোনোভাবেই আরাম পাওয়া যায় না। এ জন্য আরও কিছু নতুন ওষুধ ব্যবহার করা হয়, আরও কিছু ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলমান। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বল্প সময়ে পুরোপুরি আরাম পাওয়া বেশ কঠিন। তাই খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ, যেমন চকলেট, কফি, চিজ ইত্যাদি খাবার কম খাওয়া, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অধিক সময় টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা, কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবন করার মতো পন্থা অবলম্বন করলে মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মাইগ্রেনের ব্যথা খুব তীব্র আর যন্ত্রণাদায়ক হলেও এটি মারাত্মক কোনো রোগ নয়। এই রোগ থেকে পরিত্রাণ নয়, এটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেই চলতে হবে। দুশ্চিন্তা না করে সচেতন হলেই মাইগ্রেন নিয়েও জীবনযাপন সহজ হতে পারে।
ডা. শাহনূর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল