বাঙালি রান্নায় ধনেপাতা ও ধনেগুঁড়া অন্যতম উপাদান। এর সুঘ্রাণ ও ভেষজ গুণ দারুণ। ধনিয়া ভিটামিন সি, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, আমিষ, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে ইত্যাদি উপাদানে সমৃদ্ধ। তাই ধনিয়ার বীজ পানিতে ভিজিয়ে খেলে হৃদরোগ, পেটব্যথা, ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি হ্রাস, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস, বদহজম থেকে মুক্তি মেলে। প্রস্রাবের ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে জ্বালাভাব দূর করতেও ধনিয়ার পানি কার্যকর। নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং প্রদাহ দূর হয়। এর আরও কিছু গুণ জেনে নেওয়া যাক।
হাড় মেরামত করে
ধনিয়ার পানিতে আছে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। এ ছাড়া ভিটামিন কে-তে ভরপুর, যা আপনার রক্ত জমাট বাঁধতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন কে হাড় মেরামত করতেও সাহায্য করে, অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ফ্রি র্যাডিকেল কমায়
ধনিয়ার পানিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল হলো একধরনের আলগা অক্সিজেন অণু, যা আপনার কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এমনকি বার্ধক্যের লক্ষণগুলোও কমে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
ধনিয়ার পানি হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধনিয়ার পানিতে এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। করোনারি হৃদরোগের (এথেরোস্ক্লেরোসিস) ঝুঁকিও কমায়।
প্রদাহ কমায়
ধনেবীজের পানি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ থাকলেও প্রদাহ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো প্রদাহ কমায় এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়
ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে এই ধনিয়ার পানি। পরীক্ষায় দেখা গেছে, রক্তের গ্লুকোজ প্রক্রিয়াজাত করতে প্রয়োনীয় কিছু এনজাইমকে সক্রিয় করে ধনিয়ার পানি। ফলে রক্তে উচ্চ শর্করা থাকলে ধনিয়ার পানি খেতে পারেন।
চোখ ভালো রাখে
ধনিয়ার পানি ভিটামিন এ-এর ভালো উৎস, যা চোখের রেটিনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিন এ আপনার চোখ আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে উপকারী।
ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখে
ধনিয়ার পানি ভিটামিন সি-তে পূর্ণ। এতে ইমিউন সিস্টেম ভালো থাকে। শ্বেতরক্তকণিকাকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে এবং আয়রন শোষণে করে সহায়তা। ভিটামিন সি ক্ষত নিরাময় করে এবং কোলাজেন উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে, যা ত্বক সুন্দর করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে
প্রদাহের সঙ্গে মস্তিষ্কের রোগ, যেমন পারকিনসন্স, আলঝেইমারস ডিজিজ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস যুক্ত। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ধনিয়ার পানি এসব রোগ থেকে রক্ষা করে। এই পানি উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধনেপানি ডায়াজেপাম ওষুধের মতোই কাজ করে। ডায়াজেপাম দুশ্চিন্তা দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
হজমের সমস্যা দূর করে
ধনিয়ার বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেল হজমের সমস্যা দূর করে। ৮ সপ্তাহের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমসহ (আইবিএস) পেটব্যথা, ফোলাভাব এবং অস্বস্তি কমাতে পারে এই পানি।
সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে
এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ আছে, যা সংক্রমণ ও খাদ্যজনিত অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনিয়ার পানিতে ডোডেসেনাল নামক একটি যৌগ থাকে, যা সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে মারাত্মক খাদ্যবিষক্রিয়া হতে পারে, যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, এই পানি মূত্রনালির সংক্রমণের (ইউটিআই) জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
সূত্র: ওয়েবএমডি ও হেলথ লাইন