সব সময় কি আর মন ভালো থাকে? মাঝেমধ্যেই আমাদের চেপে ধরে খারাপ লাগা। একঘেয়ে জীবনে হাঁপিয়ে পড়ি। কিছুই যেন আর ভালো লাগে না। ভার্সিটির ক্লাস হোক কিংবা বন্ধুদের আড্ডা, অফিস হোক বা কোনো অনুষ্ঠান—কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। নেতিবাচকতায় ডুবে থাকি আমরা। মনে হয়, কোথাও কোনো কিছু ঠিক নেই। আপনার অবস্থা যদি এ রকম হয়, তাহলে প্রথমেই বলি, বেশির ভাগ সময় এ ধরনের অনুভূতি বেশিক্ষণ বা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তাই বলে এই সময়ে নিজেকে মোটেও অবহেলা করা যাবে না। এ সময় নিজেই হয়ে উঠুন নিজের সঙ্গী। নিজের একটু বাড়তি যত্ন নিন। চলুন জেনে নিই কীভাবে নেতিবাচক চিন্তা দূরে সরিয়ে মনকে ভালো করে তুলবেন—
১. বাইরে যান, হাঁটুন
মন খারাপ থাকলে আমরা বেশির ভাগ সময় নিজেকে ঘরেই বন্দী করে রাখি। তা না করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন, কাপড় পরে তৈরি হোন আর হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন। হাঁটলে মন শান্ত হয়। পার্কে বা সবুজের মধ্যে হাঁটতে বের হলে বুক ভরে শ্বাস নিন। আর কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যান নিজের সব দুঃখ।
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরতি নিন
মন খারাপের দিনে অজান্তেই আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করতে থাকি। এতে বিষণ্নতা আরও যেন জেঁকে বসে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল না করে লগআউট করুন সবকিছু থেকে। তারপর চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, কত কিছু আছে কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো। সৃষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
৩. নিজেকে সময় দিন
আপনার প্রিয় গানগুলো শুনুন। দেখুন প্রিয় কোনো ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও। দেখতে পারেন পুরোনো দিনের কোনো নাটকও। দেখে নিন মন ভালো করে দেওয়ার মতো একটা মুভি। আবার ভিন্ন কিছু করতে চাইলে দেখে আসতে পারেন একটি মঞ্চনাটক। রংতুলি নিয়ে বসতে পারেন আঁকতে। আবার ইউটিউব দেখে কাগজ কেটে বানাতে পারেন নানান অরিগ্যামি। বানিয়ে নিন কোনো একটা মজার খাবার, যা আগে কখনো খাননি। ভিন্ন কিছু করলে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য।
৪. ইতিবাচক মানুষের পাশে থাকুন
আমাদের চারপাশের মানুষের ওপর আমাদের ভালো থাকা অনেকাংশেই নির্ভর করে। আপনি দিনের বেশির ভাগ সময় যাঁদের সঙ্গে কাটান, তাঁরা কি ইতিবাচক মানুষ? আপনার আশপাশের মানুষ যদি আপনাকে সব সময় ছোট করে দেখাতে চান, আপনার ভালো দিকের কথা না বলে শুধু খারাপ দিক তুলে ধরেন, তাঁদের থেকে দূরে সরে আসুন। যাঁরা আপনাকে ভালো রাখেন, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটান বেশি করে।
৫. লিখুন
মন খারাপের সময় নেতিবাচক চিন্তা আমাদের ঘিরে ধরে। বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে আমরা কোনো কিছুই চিন্তা করতে পারি না স্বচ্ছভাবে। এই সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান হচ্ছে লেখা। আপনি যা অনুভব করছেন, একটি কাগজে লিখুন। শুরুটা কীভাবে করবেন যদি বুঝতে না পারেন, তবে চেষ্টা করুন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। আপনি কেন এমন অনুভব করছেন, আপনার কী কী ভয় কাজ করছে, কেন আপনি কষ্ট পাচ্ছেন বা রেগে আছেন, আপনি কী আশা করেছিলেন, সেটি কেন হয়নি ইত্যাদি। লিখলে আপনার মনের ধোঁয়াশা কেটে যাবে। আর লেখায় ইতিবাচকতা ও সমাধানকে গুরুত্ব দিন।
৬. নিজের প্রতি সদয় হোন
মন খারাপের জন্য বেশির ভাগ সময় আমরা নিজেকে দোষারোপ করে থাকি। আবার অবচেতনে চলে আসে অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা। কোনো ঘটনার ওপর হাত না থাকলেও ভেবে বসি, এই ঘটনার জন্যে আমিই দায়ী। কখনো মনে হয়, কিছুই করতে পারলাম না জীবনে। নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা কথা বলা আমাদের মানসিক, শারীরিক—উভয়ের দিকের জন্যই ক্ষতিকর। নিজেকে তুলনা না করে, দোষারোপ না করে বরং খুঁজে বের করুন ভালো দিকগুলো। সেই দিকগুলো নিয়ে গর্ববোধ করুন। চিন্তা করুন, নিজের গুণগুলো কীভাবে আরও শাণিত করা যায়। সময় দিন নিজের পেছনে। নিজেকে ভালোবাসুন।