শিশুদের নির্দিষ্ট কোনো খাবার বেশি খাইয়ে বা কোনো একটি ওষুধ দিয়ে লম্বা করা যায় না। শিশু কতটা দীর্ঘদেহী হবে, তার ৮০ ভাগই নির্ভর করে মা-বাবার উচ্চতার ওপর। বাকি ২০ শতাংশ নানা পারিপার্শ্বিক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্মের পর প্রথম তিন বছর এবং পরে বয়ঃসন্ধিকালে দ্রুত লম্বা হয়। মেয়েরা সর্বোচ্চ ১৫ আর ছেলেরা ১৭ বছর বয়স অবধি লম্বা হতে পারে। মাঝের সময়ে শিশু গড়ে বছরে ২ ইঞ্চি করে লম্বা হয়। অবশ্য সব সময় এই অঙ্ক না–ও মিলতে পারে।
অনেক রোগ, যেমন কিছু সিনড্রোম, অস্থিরতা, মেটাবলিক ডিজঅর্ডারের কারণে মানুষ জন্মগতভাবে খাটো হতে পারে। আবার থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোনের অভাব, টাইপ–১ ডায়াবেটিস, টার্নার সিনড্রোম, কিডনি রোগসহ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করলে শিশুর লম্বা হওয়ার সুযোগ থাকে।
মায়ের গর্ভকালে সুস্থতা ও সঠিক পুষ্টি শিশুর লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশব ও কৈশোরে জীবনযাপনের সময় কিছু বিষয় মেনে চললে কাঙ্ক্ষিত লম্বা হওয়া সম্ভব।
নিয়মিত শাকসবজি, ফলমূল, শস্যদানা, আমিষ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়া। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম শিশুর লম্বা হওয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করতে হবে। অতিমাত্রায় চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট ও চর্বি আছে এমন খাবার পরিহার করতে হবে।
সঠিক ওজন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ক্যালোরি জোগান নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘ সময় ওজন কম থাকলে শিশু খাটো হয়, আবার অতি ওজন হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে লম্বা হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য হলে শিশুর ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, তাই পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না।
শিশুর লম্বা হওয়ার পূর্বশর্ত সার্বিক সুস্থতা। ঘন ঘন অসুস্থ হলে ওজন বাড়ে না, লম্বাও হয় না।
নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করে হাড় ও মাংসপেশির রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে হবে।
শোয়া ও চলাফেরায় সঠিক ভঙ্গি মেনে চলতে হবে। বাঁকা হয়ে চললে অস্থি বেঁকে শিশু খাটো হয়।
ঘুমের মধ্যে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়, যা স্বাভাবিক লম্বা হওয়ার প্রধান নিয়ামক। তাই পরিমিত ঘুম খুব জরুরি।
শিশু কাঙ্ক্ষিত লম্বা না হলে বা অতিরিক্ত খর্ব মনে হলে দ্রুত সঠিক কারণ অনুসন্ধান ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল