ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস কীভাবে মোকাবিলা করবেন

প্রায় সারা বছরই দেশে পানিবাহিত রোগ দেখা যায়। এসব রোগ সাধারণত দূষিত পানি ও খাবার থেকেই হয়ে থাকে। এ রকম কিছু পরিচিত রোগ সম্পর্কে চলুন জেনে নিই।

ডায়রিয়া

ডায়রিয়ার কারণ বিচিত্র—বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া বা অণুজীব। ডায়রিয়া মানে বারবার পাতলা পায়খানা। রোগীর পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি, পেটব্যথা, পেট কামড়ানো, এমনকি জ্বরও হতে পারে।

কলেরাও একধরনের ডায়রিয়া। কলেরা হলে ভাতের মাড়ের মতো সাদাটে পায়খানা হতে থাকে, খুব দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে রোগী।

বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত ডায়রিয়ার উপসর্গে ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু চিকিৎসা মূলত এক—খাওয়ার স্যালাইন।

ডায়রিয়া হলে খাওয়ার স্যালাইন পান করতেই হবে

সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করা গেলে পানিশূন্যতা, লবণের ভারসাম্যহীনতা ও কিডনি বৈকল্যর মতো মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশু-বৃদ্ধ যারই ডায়রিয়া হোক, কেবল বারবার খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানোর মাধ্যমেই তাকে সুস্থ করে তোলা যায়। খুবই কম ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয়।

আমাদের দেশে শিশুদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাসে ডায়রিয়া হয়, যা এমনিতেই সেরে যায়। অনেকের একটা স্বভাব হলো পাতলা পায়খানা দু–একবার হলে মেট্রোনিডাজল ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ নিজে নিজে খেয়ে ফেলেন, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলো কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন মোটেও ঠিক নয়।

টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড

সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি নামক দুটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এ দুই রোগ হয়ে থাকে। জ্বর, পেটব্যথা, পায়খানার সমস্যা, মাথাব্যথা ইত্যাদি এই রোগের উপসর্গ। দীর্ঘমেয়াদি তীব্র জ্বর হলে টাইফয়েডের কথা আমাদের দেশে মনে রাখতেই হবে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করা না হলে পায়খানার সঙ্গে রক্ত, এমনকি নাড়ি ছিদ্র হয়ে রোগীর জীবনও বিপন্ন হতে পারে। সাধারণত প্রথম সপ্তাহে রক্ত কালচার করলে রোগজীবাণু নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়। দেরি হলে অন্যান্য টেস্ট করাতে হবে। শিরায় সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সাধারণত এর চিকিৎসা করা হয়।

জন্ডিস হলে পূর্ণ বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণই মূল চিকিৎসা। ঝাড়ফুঁক কবিরাজি করে যকৃতের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। জন্ডিস নিজে নিজেই ভালো হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই।

জন্ডিস

হেপাটাইটিস–এ এবং হেপাটাইটিস–ই পানি ও খাবারবাহিত ভাইরাস দিয়ে জন্ডিস হতে পারে। জন্ডিস হলে রোগীর চোখ ও শরীর হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। খাবারে অনীহা, বমি বমি ভাব, বমি, পেটব্যথা ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো রক্তপাত, পেটে পানি আসা, এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।

জন্ডিস হলে পূর্ণ বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণই মূল চিকিৎসা। ঝাড়ফুঁক কবিরাজি করে যকৃতের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। জন্ডিস নিজে নিজেই ভালো হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র যকৃৎ ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।