রোজ আমরা কত শত কাজ করি। সব কাজই কি সুফল বয়ে আনে? কিংবা সব কাজ কি উপকারী? কিছু কাজ বা অভ্যাস আছে, যেসবকে অতটা ক্ষতিকর মনে না হলেও আমাদের শরীর ও মনে ফেলে ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব। এ ধরনের কাজ বা অভ্যাস হয়ে ওঠে স্লো পয়জনের মতো। অর্থাৎ ধীরে ধীরে এসব কাজ আমাদের স্বাস্থ্য নষ্ট করে। চলুন, জানা যাক এমন ৯টি কাজ ও অভ্যাসের কথা।
স্ট্রেস অর্থাৎ কাজের চাপ বা যেকোনো ধরনের মানসিক অশান্তি বা অবসাদ আপনার শরীর ও মনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্রমাগত ধকলের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ইত্যাদি শরীরে বাসা বাঁধে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়।
চাকরি পছন্দ না হওয়া শুধু যে মানসিক অশান্তি, তা নয়; এর ক্ষতিকর শারীরিক প্রভাবও আছে। চাকরি নিয়ে সারাক্ষণ মনে অসন্তোষ কাজ করলে আপনার শরীরের ওপর তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। প্রায়ই মাথাব্যথা করবে, ঘুম কম হতে থাকবে, হজমে গন্ডগোল দেখা দেবে। অর্থাৎ এই সমস্যা আপনার জন্য স্লো পয়জনের মতো কাজ করবে।
কথায় আছে ‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’। সারাক্ষণ কুটিল মনের মানুষের মধ্যে থাকলে আপনার সুস্থতার ওপর কুপ্রভাব পড়বে। তারা সারাক্ষণই আপনাকে বেগাড় খাটানোর চেষ্টা করবে, আপনি ক্লান্ত নাকি অসুস্থ, সে চিন্তাও করবে না। আপনার সব চেষ্টা, অর্জন ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করবে, বিনা প্রয়োজনে তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েও বিশাল সব নাটকের সৃষ্টি করবে। এসব বিষয় আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব খারাপ।
ফাস্ট ফুড সময় বাঁচায় নিঃসন্দেহে। ঝটপট যখন তখন খেয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়া মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা। ফাস্ট ফুডগুলোতে থাকে উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট, শর্করা এবং সোডিয়াম। তাই এসব খাবার বেশি খেলে স্থূল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক। হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে।
দ্বন্দ্ব বা ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য আমরা অনেক সময় নিজেদের আবেগ প্রকাশ করি না। কিন্তু পুঞ্জিভূত আবেগ আমাদের মধ্যে মানসিক অবসাদের জন্ম দেয়। আর মানসিক অবসাদ থেকেই সৃষ্টি হয় নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা। তাই আবেগের প্রকাশ খুব জরুরি।
সকালের নাশতাকে সারা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নাশতা না করলে ওজন বেড়ে যাওয়া, বিপাকক্রিয়া গড়বড় হওয়া, বুদ্ধিমত্তা লোপ পাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকলে সৃষ্টি হয় মানসিক অবসাদ, যা ‘ক্রনিক অ্যাংজাইটি’ নামে পরিচিত। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার স্ট্রেস রেসপন্সকে ত্বরান্বিত করে। শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই উচ্চ কর্টিসল শরীরের ওজন বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়, উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে।
নিজের যত্ন না নিলে ‘বার্নআউট’ হতে পারে। বার্নআউট হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিজনিত একটি সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বার্নআউটের ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ডিপ্রেশন, সব সময় দুর্বল বোধ করা, রক্ত সংবহনতন্ত্রের নানা রোগ ইত্যাদি।
নিজেকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপারটা খুব সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরে রাখতে এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের অর্জনগুলোকে স্বীকার করতে ব্যর্থ হলে আপনার কাছে কোনো কিছুই পর্যাপ্ত মনে হবে না, আপনার আত্মমর্যাদার ঘাটতি দেখা দেবে এবং শেষ পর্যন্ত আপনি বিষণ্ন হয়ে পড়বেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট