পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসলের বিকল্প নেই। কিন্তু শীতকালে কীভাবে গোসল করালে শিশুকে ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া থেকে দূরে রাখা যাবে, আবার শিশুর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার দিকটাও ঠিক থাকবে—এই দুই দিকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নবজাতকদের জন্য এই সতর্কতা আরও বেশি দরকারি।
সাধারণত নবজাতক মানে ২৮ দিনের কম বয়সী শিশু। জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর নবজাতককে প্রথম গোসল করানো হয়, সেটা শীত বা গ্রীষ্ম, যে সময়ই হোক। নবজাতক অবস্থায় সপ্তাহে দুই বা তিন দিন গোসল করানো উচিত। এরপর একটু বড় হলে প্রতিদিন গোসল করানো যেতে পারে।
শিশুকে গরম রাখা যেকোনো সময়েই খুব গুরুত্বপূর্ণ, শীতকালে সেটা আরও বেশি জরুরি। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় ত্বক শুষ্ক থাকে, ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। এ জন্য এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়া বা সর্দি–কাশির লক্ষণ না থাকলে প্রতিদিন গোসল করানোই ভালো। অতিরিক্ত শীত পড়লে এক বা দুই দিন অন্তর গোসল করানো যেতে পারে। গোসল প্রতিদিন করানো সম্ভব না হলে কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ভালো করে শিশুর শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
শিশুকে প্রতিদিন একই সময়ে গোসল করানো উচিত। এতে শিশুর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা গড়ে ওঠে। শিশুর খাওয়া বা ঘুমানোর সময় গোসল করানো উচিত নয়। এতে শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।
খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর গোসলের স্থানটি যেন উষ্ণ হয়। সেখানে যেন ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে।
গোসলের আগে শিশুর গায়ে প্রাকৃতিক কোনো তেল লাগানো যেতে পারে। তবে শিশুর ত্বকে কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তেল লাগানো উচিত নয়।
পানি ঠান্ডা বা খুব গরম হওয়া উচিত নয়। কুসুম গরম পানিতে শিশুকে গোসল করানো উচিত। শিশুর গায়ে পানি দেওয়ার আগে হাতে লাগিয়ে দেখে নেওয়া উচিত খুব বেশি গরম কি না।
শিশুকে বেশিক্ষণ ধরে গোসল করানো উচিত নয়। ৫ থেকে ১০ মিনিটের গোসলই শিশুর জন্য যথেষ্ট!
শিশুকে গোসলের পর যে পোশাক পরানো হবে, সেটা হাতের কাছে থাকা উচিত, যেন মুছিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিয়ে দেওয়া যায়।
গোসল করার পরেই মাথা ও কান ভালো করে মুছে দিতে হবে। কানের ভেতরে যেন পানি না ঢোকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চুলে যেন পানি না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চুল লম্বা হলে এদিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। কারণ, শরীর শুকনা থাকলেও ভেজা চুলের কারণে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
গোসলের পর বাচ্চার গায়ে বয়স উপযোগী ময়েশ্চারাইজার লাগানো যেতে পারে, এতে ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
শিশুকে কোনো অবস্থায়ই গোসলের জন্য পানির কাছে একা যেতে দেওয়া উচিত নয়।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর