জিমে গিয়ে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন নানা রকম ব্যায়াম করে। উদ্দেশ্য ওজন কমানো ও শরীর নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু দেখা যায়, ছোটখাটো বেখেয়ালে নানা কসরত করেও ওজন কমছে না। এমন কিছু ভুল আছে জিমে, যেটা করলে ওজন কমাতে পারবেন না। দেখুন তো এই ভুলগুলো আপনিও করছেন কি না।
মনে রাখবেন, ওজন শরীরের সুস্থতা ও শারীরিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করেই গেলেন, কিন্তু খাবারে অনিয়ম করেন, এই অভ্যাস আপনার ওজন কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিতে পারে। শরীরে পানির পরিমাণ, পেশি, দৈনিক খাবারের পরিমাণ, ঘুম ও হাঁটাচলার দ্বারা ওজন প্রভাবিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, আপনি কতটা খাবার ও পানীয় গ্রহণ করেছেন, তার ওপর ওজন কমানোর বিষয়টি নির্ভর করে। নারীদের হরমোন পরিবর্তনের কারণেও ওজন কমানো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। জিমে হয়তো আপনার মনোযোগ পেশি বৃদ্ধিতে, একই সঙ্গে চর্বিও কমাচ্ছেন, তাহলে আপনার ওজন কমবে না। অনেকেই শুধু কার্ডিও করেন, যা শরীরের স্বাভাবিক সুস্থতার জন্য ভালো। ওজন কমানো যখন লক্ষ্য, তখন শুধু কার্ডিওনির্ভর ব্যায়াম করা বড় ধরনের ভুল। আবার অনেকেই ওজন কমানোর ব্যায়াম শুরুর আগে ‘ওয়ার্ম আপ’ না করে সরাসরি কঠিন ব্যায়াম শুরু করেন। এ ধরনের ব্যায়ামে ওজন কমানোর প্রচেষ্টা নষ্ট হয়।
আপনি যদি মাপ বুঝে খাবার না খান আর নিয়ন্ত্রিত ব্যায়াম না করেন, তাহলে মাংসপেশি আরও কমে যেতে পারে। এই অবস্থায় হজমেও সমস্যা হয়। পরিমিত ব্যায়াম শরীরের ফ্যাট কমিয়ে বিপাকক্রিয়া যেন ধীর না হয়, সে জন্য কাজ করে। আর অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে দেখা দেয় কিছু শারীরিক সমস্যাও। অতিরিক্ত ব্যায়াম দীর্ঘমেয়াদি হয় না। এতে উল্টো মানসিক চাপ তৈরি করে। অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখা কঠিন, এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অত্যধিক ব্যায়াম মানে শরীরকে বেশি ক্যালরি খরচ করতে বাধ্য করা। একইভাবে সেই ক্যালরি থেকে দৈনিক যতটা দরকার, সেটা মেটাচ্ছেন কি না, খেয়াল রাখতে হবে। ওজনের ব্যায়াম আর প্রতি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার কার্ডিও ওজন কমানোর সময় বিপাকীয় হার ঠিক রাখার জন্য সঠিক কৌশল। ব্যায়াম করা ছেড়ে দিলে বা অনিয়মিত জিমে গেলে শরীরের পেশির ভর হ্রাস পায়। বিপাকের গতি কমে যায়।
অনেকে জিমে ট্রেনারের অধীনে থাকলেও তাঁর নির্দেশনা না মেনে ব্যায়াম করেন। হয়তো যে ব্যায়াম তিন সেট ১০ মিনিটে করার কথা, আপনি সেটা ৫ সেট ৫ মিনিটে সেরে ফেললেন। এ ধরনের ভুল ওজন কমানোর জন্য বড় বাধা। জিমে ব্যায়ামের মাত্রা বুঝে ব্যায়াম করতে হবে। বেশি করলে বিপদ, কম করলেও বিপদ। জিমে ওজন কমানোর কিছু নির্ধারিত ব্যায়াম আছে। ট্রেনারের কথামতো সব ব্যায়াম নিয়ম মেনে করতে হবে। যা আপনার ভালো লাগে, শুধু সেটা করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হবে। ওজন কমানোর জন্য ডাম্বলের ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করতে হবে। এগুলো শক্তি ও শারীরিক কার্যকারিতাও বাড়ায়। এ ছাড়া পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফ্যাট কমানোর জন্য জিমে কার্যকর কৌশল হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের অ্যারোবিক্স ব্যায়াম ও ভারোত্তলন। এগুলো শরীরের মেটাবলিক রেট বাড়াতে কাজ করে। এতে পেশির ভরে নিয়ন্ত্রণ আসে ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ফ্যাট কমে।
ওজন কমানোর জন্য ক্যালরি কমাতে হবে। আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি শরীরে গ্রহণ করবেন, তার চেয়ে বেশি ক্যালরি জিমে খরচ করতে হবে। অনেক বছর ধরে মনে করা হতো, প্রতি সপ্তাহে সাড়ে তিন হাজার ক্যালরি কমালে ১ পাউন্ড বা শূন্য দশমিক ৪৫ কেজি ফ্যাট বা চর্বি কমে। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় ক্যালরির ঘাটতি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। জিমে ঘাম ঝরানোর পরও আপনি হয়তো এমন খাবার খাচ্ছেন, যা স্বাস্থ্যকর; কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ বেশি। যেমন বাদাম ও মাছে ক্যালরি বেশি থাকে। এসব খাবার পরিমাণমতো খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আবার নিয়মিত জিম করার সময় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ খুব বেশি কমিয়ে ফেললে বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। খুব কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে পেশিক্ষয় হতে পারে। তখন শারীরিক বিপাকের হার ধীর হয়ে যেতে পারে। অত্যধিক ক্যালরি গ্রহণ করলে আপনার ওজন কমার বদলে স্থির হয়ে থাকতে পারে। আবার খুব কম ক্যালরির খাবার গ্রহণ করলে আপনি সারাক্ষণ খিদে পেয়েছে অনুভূতিতে থাকবেন।
প্রক্রিয়াজাত লো ফ্যাটের খাদ্য অনেকেই পছন্দ করেন। জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করার সময় এসব খাবার আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এসব খাবারের আবার বিপরীত প্রভাবও দেখা যায়। স্বাদ উন্নত করতে এসব খাবারে চিনি যুক্ত করা হয়। লো ফ্যাট বা কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে আপনার দিনভর ক্ষুধার্ত বোধ হতে পারে। আর এই ভাবনা থেকে আপনার শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। ব্যায়াম করছেন; কিন্তু পর্যাপ্ত প্রোটিন না খেলে ওজন কমানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। প্রোটিনযুক্ত খাবার খিদে কমায়, বিপাকীয় হার বজায় রাখতে বা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানোর সময় উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার নিশ্চিত করুন। প্রোটিনযুক্ত খাবার বলতে শুধু মাংস বা দুগ্ধজাত খাবার বোঝায় না। মটরশুঁটি কিংবা শিমের মতো খাবারও ভালো প্রোটিনের উৎস। এ ছাড়া আঁশযুক্ত খাবার না খেলে ওজন কমানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। এ ছাড়া বেশি চিনিযুক্ত পানীয় পান করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া