শরীরে কোনো টিউমার বা সন্দেহজনক ক্যানসার কিংবা ক্ষতস্থান থেকে সরু সুচের মাধ্যমে সামান্য নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা করাকে বলে এফএনএসি
শরীরে কোনো টিউমার বা সন্দেহজনক ক্যানসার কিংবা ক্ষতস্থান থেকে সরু সুচের মাধ্যমে সামান্য নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা করাকে বলে এফএনএসি

এফএনএসি টেস্ট কী, কেন করা হয়?

শরীরে কোনো টিউমার বা সন্দেহজনক ক্যানসার কিংবা ক্ষতস্থান থেকে সরু সুচের মাধ্যমে সামান্য নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা করাকে বলে এফএনএসি বা ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি। এ পরীক্ষা সাধারণত করেন একজন প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ। তবে নমুনা কালেকশন ক্লিনিশিয়ানও করতে পারেন। তবে একই প্যাথলজিস্ট নমুনা কালেকশন ও পরীক্ষা করতে পারলে রোগ শনাক্তকরণ বেশি সঠিক হয়।

এফএনএসি পরীক্ষা করার কথা শুনলেই অনেকের মনে আতঙ্ক জন্মায়। কারণ, বেশির ভাগ সময় ক্যানসারের আশঙ্কা বুঝতে এ টেস্ট করা হয়। একজন ক্লিনিশিয়ান যখন কোনো রোগীকে এফএনএসি করতে পাঠান, তখন সাধারণত একটা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস লিখে দেন, যাতে প্যাথলজিস্ট সেই বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে খেয়াল করেন। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়; ক্লিনিশিয়ানের ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস ও প্যাথলজিস্টের প্যাথলজিক্যাল ডায়াগনোসিসের সমন্বয়েই ফাইনাল ডায়াগনোসিস হয়। কাজেই প্যাথলজিস্টের কাছে সব ক্লিনিক্যাল তথ্য–উপাত্ত ও ইতিহাস থাকা ভালো।

এফএনএসি পরীক্ষা আর হিস্টোপ্যাথলজি (বায়োপসি) পরীক্ষা এক নয়। হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা করা হয় টিস্যু নিয়ে। আর এফএনএসি পরীক্ষা করা হয় টিস্যু থেকে সামান্য কিছু কোষ নিয়ে। তাই হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ডায়াগনোসিস শতভাগের কাছাকাছি নিখুঁত হয়। কিন্তু এফএনএসির অতটা নিখুঁত হওয়ার ক্ষমতা কম। কারণ, এখানে নির্দিষ্ট জায়গায় সুচ না ঢোকালে সঠিক ডায়াগনোসিস না–ও হতে পারে। তাই মূল চিকিৎসা দেওয়ার আগে হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা, বিশেষ করে ক্যানসারের ক্ষেত্রে করে নেওয়া ভালো।

কমেন্টে ‘পজিটিভ ফর ম্যালিগন্যান্ট সেল’ কথাটির অর্থ হলো ‘এফএনএসি পরীক্ষা অনুযায়ী এটা ক্যানসার’। একইভাবে ‘নেগেটিভ ফর ম্যালিগন্যান্ট সেল’ অর্থ কোনো ক্যানসার সেল পাওয়া যায়নি, ক্যানসার থাকতেও পারে, তবে পাওয়া যায়নি। ‘সাসপিসিয়াস ফর ম্যালিগন্যান্ট সেল’ মানে যেগুলো ক্যানসার সেল বলে সন্দেহ হচ্ছে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

তাহলে কী করণীয়

ক্লিনিক্যাল উপাত্তের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে বা হিস্টোপ্যাথলজি করে সন্দেহ দূর করা যেতে পারে। ‘সাজেস্টিভ অব ম্যালিগন্যান্ট সেল’ অর্থ সেলগুলো দেখে মনে হচ্ছে ক্যানসার, তবে না–ও হতে পারে আর ‘পসিবিলিটি অব ম্যালিগন্যান্ট সেল’ অর্থ ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আছে, তবে অতটা জোরালো নয়। এসব ক্ষেত্রে ক্লিনিশিয়ান সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন। আরেকবার এফএনএসি করাতে পারেন অথবা হিস্টোপ্যাথলজি করাতে পারেন।শুধু ক্যানসার নয়, কোনো প্রদাহজনিত রোগাক্রান্ত স্থান থেকে এফএনএসি করলে ইনফ্লামেটরি সেল পাওয়া যায়। ইনফেকশন বা ইনফ্লামেশন নতুন না পুরোনো, তা কোষের ধরন দেখে ‘অ্যাকিউট ইনফ্লামেটরি লেশন’ বা ‘ক্রনিক নন-স্পেসিফিক ইনফ্লামেশন’ বলা হয়। কখনো কমেন্টে লেখা হয়, ‘গ্রানুলোমেটাস ইনফ্লামেশন’। এ ধরনের ইনফ্লামেশনের আমাদের দেশে অন্যতম কারণ যক্ষ্মা বা টিবি। টিবি নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে টিবির জীবাণুর উপস্থিতি পেতে হবে। সাধারণত জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে টিবির জীবাণুর জিন পাওয়া যায়। আবার চিকিৎসকের সন্দেহ হলে বা এমটি পরীক্ষা পজিটিভ হলেও টিবির চিকিৎসা শুরু করা যায়।