ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ
প্রশ্ন: আমাদের বাড়িতে একসঙ্গে দুজনের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। আমার ৬ বছর বয়সের ছেলে ও ৭২ বছরের মা। দুজনই খুব দুর্বল হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো, দুজনকেই কি একই খাবার খেতে দেব? ডেঙ্গু রোগীর খাবার কী? কে কতটা খাবে? পরামর্শ চাই।
কামাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ
উত্তর: আপনার বাসার দুই বিপরীত বয়সের ব্যক্তি একই রোগে আক্রান্ত। তাই তাঁদের পছন্দ ভিন্ন হবে, তবে যিনি দুজনের পরিচর্যা করবেন, তাঁর কাজ সহজ করার জন্য সাধারণভাবে পুরো বিষয় আলোচনা করছি।
ডেঙ্গু হওয়ার পর বাড়িতে চিকিৎসা নিলে রোগীর দিকে একটু বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। জ্বরের সময় বেশির ভাগ মানুষেরই খাবারে অরুচি থাকে। এ সময় বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্যালরি ও পুষ্টির চাহিদা বেড়ে যায়। রোগীর বিপাকের হার, শরীরের তাপমাত্রা, হজমের শক্তি ও শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে পুষ্টি ও পথ্য নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় বিপাকীয় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্যালরি ও পুষ্টির চাহিদাও বেড়ে যায়। রোগীর বিপাকের হার, শরীরের তাপমাত্রা, হজমের শক্তি ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে পথ্য নির্বাচন করতে হবে। কেমন হবে সেই খাবার, চলুন সেটা এবার জেনে নেওয়া যাক—
তরল ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে: সহজে হজম হয় এমন তরল ও নরম খাবারের ক্যালরি বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন জাউভাত, সুজি, সাবু, পায়েস, পুডিং, ফিরনি, ফালুদা, লাচ্ছি, দই-মিষ্টি, মিল্কশেক, চিড়া-দুধ, নরম খিচুড়ি, পিসপাস, ডাল-সবজি, মাছের ঝোল তরকারি ইত্যাদি। তবে যা–ই দেন, খাবার রোগীর পছন্দসই হতে হবে, যাতে ধীরে ধীরে তার রুচি ফিরে আসে।
খাবারের পরিমাণ: অল্প অল্প করে, বারবার এমনভাবে খেতে হবে, যাতে শরীরের ক্যালরিসহ পুষ্টিচাহিদাও ঠিকমতো পূরণ হয়। প্রয়োজনে দুই ঘণ্টা পরপর খাবার দিতে পারেন।
পানিজাতীয় খাবার: পানি শরীরের জন্য অপরিহার্য। ডেঙ্গু চলাকালে ও জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর, দুই সময়েই এটা দরকারি। পানিসহ অন্যান্য তরল মিলে সারা দিনে ৩ লিটার পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য তরল, যেমন তাজা ফলের শরবত (অবশ্যই বাসায় তৈরি হতে হবে, পানি মেশানো), মুরগি বা সবজির স্যুপ, খাবার স্যালাইন (ডায়াবেটিস থাকলে রাইস স্যালাইন), ডাবের পানি ইত্যাদি, যা শরীরে পানিশূন্যতাসহ ইলেকট্রোলাইটের অসমতা রোধে সাহায্য করবে।
প্রোটিন: ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরে প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখা ও বাড়িয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য প্রোটিন খেতে হবে। শরীরে অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক রাখা, ক্ষয়পূরণসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিদিন খাবারে দুধ, ডিম, মাছ, ডাল, বাদাম, মুরগি, চর্বিহীন লাল মাংস ইত্যাদির যেকোনোটা রাখতে হবে।
আয়রন: ডেঙ্গু জ্বরের সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা ও হিমোগ্লোবিন কমে যায়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে ও প্লাটিলেট তৈরি করতে শরীরের প্রচুর আয়রনের প্রয়োজন হয়। কলিজা, ডিম, ডালিম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, বিটের জুস, খেজুর, কিশমিশ, ড্রাগন, জাম্বুরা, জলপাই, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি আয়রন শোষণের জন্য খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি খেতে হবে। এই ভিটামিন অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে। তাই কমলা, জাম্বুরা, আনারস, লেবু ও অন্যান্য টকজাতীয় ফল খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
যদি জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও বমি থাকে, তবে জাউভাত, কাঁচকলার ঝোল খুবই উপকারী। সঙ্গে মাছ বা মুরগির পাতলা ঝোল, মুরগির স্যুপ, রাইস স্যুপ, আপেল জুস বা আপেল পিউরি, ডাবের পানি ও ওরাল স্যালাইন ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
এ সময় রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে, তাই ৭ থেকে ১০ দিন ভারী কোনো কাজ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। নিয়মিত খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। তবে রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে। চাকরিজীবী হলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।