শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু ঘুমের সমস্যায় ভুগে থাকে। এটি তাদের শারীরিক বিকাশে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। এমন শিশুরা স্কুলে অমনোযোগী থাকে, দিনে ঝিমঝিম ভাব থাকে, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে না, মেজাজ খিটখিটে হয়, দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা ও স্থূলতায় ভুগে থাকে।
শিশুদের মধ্যে ইনসমনিয়া (কম ঘুম) বা হাইপারসমনিয়া (অতিরিক্ত ঘুম) বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা, বিছানায় প্রস্রাব করা, ঘুমের মধ্যে হাঁটা, কথা বলা বা নাক ডাকার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ইনসমনিয়া হচ্ছে শুলেও সহজে ঘুম না আসা, ঘুম এলেও বারবার ভেঙে যাওয়া, সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যাওয়া। ঘুমানোর আগে অনেকক্ষণ মুঠোফোন দেখা, পারিবারিক অশান্তি, স্থান পরিবর্তন, মানসিক চাপ, স্নায়ুর বিকাশজনিত বিভিন্ন রোগ, যেমন অটিজম, হাইপারঅ্যাকটিভিটি, সেরেব্রাল পালসি এবং শারীরিক অসুস্থতা, যেমন শ্বাসকষ্ট, স্ক্যাবিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, শরীরে তীব্র ব্যথার কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। আবার মানসিক রোগ, যেমন দুশ্চিন্তা বা হতাশা ও বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমন হতে পারে।
হাইপারসমনিয়া হচ্ছে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরও দিনে ঘন ঘন ঘুমানো অথবা ঝিমুনি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে ঘুম ভাব বেশি থাকার অন্যতম কারণ অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)। এসব শিশু ঘুমের মধ্যে ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় শ্বাস নিতে পারে না। এরা মুখ খোলা রেখে ঘুমায় অথবা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার মতো শব্দ করে। ওএসএর কারণ হচ্ছে অ্যাডেনয়েড ও টনসিলের সমস্যা এবং স্থূলতা।
অনেক সময় বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পায়, জেগে চিৎকার করতে থাকে, বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে পালাতে চায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় নাইটমেয়ার ও স্লিপ টেরর নামে দুটি ভিন্ন সমস্যার কথা আছে।
৫-১২ বছর বয়সী শিশুরা অনেক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানা থেকে নেমে চোখ খোলা রেখে চারপাশে হাঁটে, কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারে না। এ ধরনের সমস্যা বিপজ্জনক। কারণ, ঘুমের মধ্যে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঘরের দরজা-জানালা ভালোমতো বন্ধ রাখতে হবে। ধারালো ও বিপজ্জনক জিনিসপত্র নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
পাঁচ বছর বয়সের পর কোনো শিশু সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার পরপর তিন মাস ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করলে তাকে নকচারনাল অ্যানিউরিসিস বা বেড ওয়েটিং বলা হয়। ছেলেশিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। ঘুমানোর বেশ আগে রাতের খাবার খাওয়ানো, ঘুমানোর আগে প্রস্রাব করানো এবং ঘুমের মধ্যে দু-একবার জাগিয়ে প্রস্রাব করালে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। সমস্যা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুদের ঘুমের সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমেই ঘুমের সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ঘুমানোর সময় মুঠোফোন বা টেলিভিশন দেখানো যাবে না। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগার অভ্যাস করতে হবে। পরিচ্ছন্ন নরম বিছানা এবং শব্দ ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। শিশুকে নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়ামে অভ্যস্ত করতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর