পানি জীবনরক্ষাকারী উপাদান। কিন্তু জীবনরক্ষা করার পরিবর্তে এটি জীবননাশের কারণও হতে পারে, যদি সঠিকভাবে বিশুদ্ধ করা না হয়। কী কী উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়, তা জানা জরুরি।
পানি বিশুদ্ধ করার সর্বজনীন উপায় ফোটনো। কিন্তু পানি ঠিক কতক্ষণ ফুটাতে হবে, সে সম্পর্কে রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুযায়ী ৬০°ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৫-২৫ মিনিট ফুটাতে হবে অথবা ১০০°ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বা টগবগ করে ফোটার পর ১-৩ মিনিট পর্যন্ত ফোটাতে হবে। অতিরিক্ত সময় পানি ফোটানোর ফলে এর মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদানসহ অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়।
পানি বিশুদ্ধ করার আরও একটি পরিচিত উপায়—ছাঁকনি পদ্ধতি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য ছাঁকনি পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। ছাঁকনি পদ্ধতি সহজে অল্প খরচে তৈরি করা যায়। কীভাবে এই পদ্ধতি কাজ করে? শুরুতে একটি পরিষ্কার পাত্রে ছোট ছোট ছিদ্র করে সুতি পাতলা কাপড় দিয়ে কিছু কয়লার স্তর দিতে হবে। এরপরের স্তরে বালি এবং পাথর দিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় নিজস্ব ‘পরিশোধন যন্ত্র’। ছাঁকনি পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য উপাদানগুলো কিছুদিন পরপর পরিবর্তন করতে হবে।
বাজারে ক্লোরিন ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে খুব সহজে অল্প সময়ে বেশি পানি বিশুদ্ধ করা যায়। ১টি ট্যাবলেট দিয়ে ৩ লিটার পানি বিশুদ্ধ করা যায়।
ব্লিচিং পাউডার ১০ লিটার পানির মধ্যে দিতে হয় এবং ৩০ মিনিট পর ওপরের পানি আরেকটি পাত্রে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে হয়।
এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধকরণের জন্য পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকতে পারে, যা সংরক্ষণের পর কাঠি দিয়ে নড়াচড়া করলে অনেকটাই কমে যায়। অন্তঃসত্ত্বা ও যাঁরা থাইরয়েড সমস্যা ভুগছেন—তাঁরা ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং দিয়ে বিশুদ্ধ করা পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
তীব্র সূর্যের আলোতে পানি ৬ ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সে রকম প্রখর রোদ আপনি না-ও পেতে পারেন।
১ লিটার পানিতে ২ শতাংশ আয়োডিন দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। অথবা আয়োডিনের ট্যাবলেট ১ লিটার পানিতে ২টি বা ঘোলা পানি হলে ৩টি দিয়ে বিশুদ্ধ করা যায়। তবে এই পদ্ধতি দক্ষ মানুষ ছাড়া করা যাবে না। কারণ, আয়োডিনের মাত্রা ঠিক না থাকলে পানি বিশুদ্ধ হবে না। আয়োডিন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা পানি একটানা ৩ সপ্তাহের বেশি সেবন করা যাবে না। কারণ, এতে থাইরয়েডজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা ও থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগী আয়োডিনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা পানি পান করবেন না।
পানি সংরক্ষণের পাত্রটি অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। প্লাস্টিকের পাত্র না হলে ভালো। সংরক্ষণের জন্য মাটি, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ব্যবহার করতে হবে।
সরাসরি আকাশ থেকে পাওয়া বৃষ্টির পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সময় দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সংরক্ষণের পর তা ফুটিয়ে বা ছেঁকে বা অন্য উপায়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে।
ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের উৎস পানি, যা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই জীবনরক্ষাকারী উপাদানটি গ্রহণের আগে এর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
ডা. শিমু আক্তার: সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকস বিভাগ, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর