ওজন কমাতে কত রকম পদ্ধতিই তো জনপ্রিয় হচ্ছে আজকাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইউটিউবের মতো ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে ওজন কমানোর বহু পদ্ধতি সম্পর্কেই ধারণা পাওয়া যায়। তবে ভালোমন্দ দিক বা কোনটি আপনার জন্য প্রযোজ্য, না জেনে যেকোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ শুরু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। একজন কোনো একটা পদ্ধতি অনুসরণ করে উপকার পেয়েছেন বলেই যে সেটি আপনার জন্যও উপকারী হবে, তেমনটা ধরে নেওয়া যাবে না।
আমরা সাধারণভাবে তিন বেলা খেয়ে অভ্যস্ত। বিকেলের চা-নাশতার পর্বটিকে হিসাবে ধরলে সেটি হয়ে দাঁড়ায় চার বেলা। সকালের নাশতা আর দুপুরের খাবারের মাঝের সময়টাতেও অনেকে টুকিটাকি নাশতা খেয়ে থাকেন। সারাদিনের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় ক্যালরিটুকু ধাপে ধাপে গ্রহণ করাই বিজ্ঞানসম্মত। একবেলায় যতটা পারা যায়, তা খেয়ে নেওয়ার পর সারা দিন, সারা রাত না খেয়ে থাকলে ওজন কমবে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা ভালো ফল বয়ে আনবে না। এমনটাই বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট তাসনোভা মাহিন।
একবেলা খেয়ে যে উপকার পাবেন
একবারে অনেক বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ সম্ভব হয় না বলে সারাদিনে ক্যালরি গ্রহণ হয় কম। তাই সারাদিনে মাত্র একবার খেলে ওজন কমতে পারে বেশ দ্রুত। তা ছাড়া আলাদা আলাদা বেলায় উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন নানা রকম খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ফলে রক্তের সুগার এবং খারাপ চর্বির পরিমাণও থাকে নিয়ন্ত্রণে। সারাদিনে একটা বেলা ইচ্ছামতো যেকোনো খাবার খাওয়া যাবে, আবার ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে—এমন ভাবনা থেকে এই ধরনের পদ্ধতিতে ওজন কমাতে আগ্রহী হতে পারেন আপনি।
সমস্যা হতে পারে নানা রকম
আপনি একাহারী হতে চাইলে নানা দিক থেকেই বেশ মুশকিলে পড়তে পারেন। সারা দিনে আপনার ক্ষুধা তো লাগবেই। রক্তে সুগারের মাত্রা কমে আসতে থাকলে আপনি নিস্তেজ বোধ করবেন। সারা দিন ‘এনার্জি’ নিয়ে কাজ করতে পারবেন না। কাজেকর্মে ধীর হয়ে পড়বেন। মনোযোগ ধরে রাখতে, নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ‘ফোকাস’ করতে সমস্যায় পড়বেন। এ সময় একটা ভীষণ বিরক্তিকর অনুভূতি কাজ করতে পারে আপনার মধ্যে। মনের অজান্তেই আপনি অন্যের সঙ্গে খিটখিটে আচরণ করে ফেলতে পারেন। লম্বা সময় খাবার না খেলে পাকস্থলীতে জমা হবে অ্যাসিড। ফলে পেটে যন্ত্রণা হবে। দীর্ঘদিন এ অভ্যাস ধরে রাখলে পাকস্থলীতে আলসারও হতে পারে। আবার যে বেলা খাবার খাচ্ছেন, সেই বেলা অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খেতে গিয়েও অসুস্থ বোধ করতে পারেন আপনি।
কষ্ট করে এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়ে একটানা লম্বা সময় এর চর্চা করতে গেলেও কিন্তু মুশকিল। কারণ, দীর্ঘদিন এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসের চর্চা করলে দেহের বিপাকক্রিয়ার হার কমে যায়, দেহে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরতে গেলে তখন আবার বেশ দ্রুত ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
তা ছাড়া একবেলা হঠাৎ করে উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খাওয়ার কারণে রক্তের সুগারের মাত্রাও হুট করে বেড়ে যেতে পারে (সুগার স্পাইক)। এর ফলে রক্তনালির ভেতরের দিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
ধীরে চলুন
ওজন যেমন কেবল এক মাসেই বাড়েনি, তেমনি স্বাভাবিকভাবেই তা এক মাসে কমবেও না। এই স্বাভাবিকতাকে মেনে নিন। ওজন কমাতে চাইলে রোজ আপনার কতটা ক্যালরি গ্রহণ এবং কতটা পোড়ানো প্রয়োজন, একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে তা জেনে নিন। এমনভাবে ধীরে ধীরে ওজন কমান, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যকর ওজনটা ধরে রাখতে পারেন আপনি।