যতই দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে স্মার্টফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারের ওপর নির্ভরতা। সেই সঙ্গে বাড়ছে চোখের ওপর চাপ। শরীর ভালো রাখার জন্য হাঁটাহাঁটি, শরীরচর্চা করলেও চোখ ভালো রাখতেও যে চোখের ব্যায়ামের প্রয়োজন, সে কথা আমরা অনেকেই জানি না। আবার অনেকে জানলেও সময়ের অভাবে চর্চা করা হয়ে ওঠে না। এখানে চোখের খুব সহজ পাঁচটি ব্যায়ামের কথা জানাচ্ছি, যেগুলো খুব কম সময়ে, খুব সহজেই করা যায়, আর চোখও প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ থাকে।
১. মিটমিট করা
চোখ মিটমিট করলে চোখের ওপর একধরনের তৈলাক্ত পানি আসে, যা চোখকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। কাজের চাপে অনেক সময় অনেকে এটা করতেও ভুলে যান, সারাক্ষণ চোখ খুলে রাখেন স্ক্রিনের ওপর। যে কারণে অনেকক্ষণ কাজ করার পর চোখ জ্বালা করে। এ জন্য কাজের ফাঁকে ২০ মিনিট পরপর ২০-৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে চোখ মিটমিট করা জরুরি।
২. দৃষ্টি নিবদ্ধ
ল্যাপটপ বা মুঠোফোনে একটানা কাজ করার সময় ১-২ মিনিট বিরতি নিয়ে দূরে কোথাও দৃষ্টি নিবদ্ধ বা ফোকাস করাটা বেশ ভালো ব্যায়াম। দূরে ও কাছে—এভাবে ১০ সেকেন্ড করে বিরতি দিয়ে দিয়ে ফোকাস করতে হবে। আর যদি দূরের সবুজ রঙের কোনো জিনিসের দিকে দৃষ্টি ফেলতে পারা যায়, তাহলে তা আরও ভালো হয়। সবুজ রং চোখের জন্য আরামদায়ক। এভাবে কমপক্ষে পাঁচবার করতে হবে।
৩. ২০-২০-২০ নিয়ম
২০-২০-২০ নিয়মটি চোখের ব্যায়ামের মধ্যে অন্যতম, এর মাধ্যমে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রতিরোধ করা যায়। নিয়ম: প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে একটি বস্তুর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হয়।
৪. হাতের তালুর উষ্ণতা
এটি অত্যন্ত আরামদায়ক একটি ব্যায়াম, যা চোখের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে। নিয়ম হলো দুই হাতের তালু একে অপরের সঙ্গে ঘষে একটু উষ্ণ হওয়ার পর চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপর উষ্ণ তালু রাখতে হবে, এভাবে ৪ থেকে ৫ বার করতে হবে।
৫. চোখ পাকানো
চোখ রোল করা বা পাকানো একটি সহজ ব্যায়াম, যা স্ট্রেইন বা প্রসারণ কমাতে সাহায্য করে। এটা করার নিয়ম হলো প্রথমে মাথা স্থির রেখে ডানে ও বাঁয়ে কয়েকবার তাকাতে হবে, এরপর কয়েকবার ওপরে ও নিচে তাকাতে হবে।
চোখের সুস্থতায় খাবার
যেকোনো ব্যায়ামের প্রথম অংশ খাবার। চোখের ক্ষেত্রেও তা–ই। আমরা সবাই জানি, কোন খাবারগুলো দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্য ভালো। ভিটামিন এ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার চোখের জন্য সবচেয়ে ভালো, যেমন সবুজ ও লালশাক, কাঁচা মরিচ, টমেটো, বরবটি, মিষ্টি আলু, গাজর এবং হলুদ তরকারি, যেমন মিষ্টিকুমড়া। সবুজ এসব শাকসবজি শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে বড় মাছের তেল এবং ছোট মাছও চোখের জন্য বেশ পুষ্টিদায়ক।
চোখের ব্যায়াম করার সুবিধা
আলোর প্রতি চোখের সংবেদনশীলতা হ্রাস করে।
এটি চোখের দুর্বল পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
চোখের চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ফোকাস বাড়ানোর জন্য চোখের পেশিকে প্রস্তুত করে।
ডা. হিমেল বিশ্বাস: আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা