তুচ্ছ একটা ঘটনা, তাতেই বিগড়ে গেল মেজাজ। নিমেষেই নষ্ট হয়ে গেল আনন্দের মুহূর্তটা। হয়তো সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। ফুরফুরে মেজাজটা অমন বিগড়ে যাওয়ার পর আর ঘুরতে যাওয়াই হলো না। মেজাজের এমন রংবদল কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে অল্পতেই অভিমানের মেঘ জমা আর সামান্য বিষয়েই চোখে জল আসা একটু বেশি বেশি ঘটে। দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ থাকে। অথচ তিনি নিজেই হয়তো তাঁর এমন আচরণের কারণটা উপলব্ধি করতে পারছেন না। নারী-পুরুষ যে কারও এমন হুটহাট মনমেজাজের অদলবদল ঘটতে পারে। একে মুড সুইংও বলা যায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রচণ্ড মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা হতাশায় ভুগলে এমনটা হতে পারে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের প্রভাবে মুড সুইং বেশি হয়, যা একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। জীবনের নানা ধাপে স্বাভাবিক নিয়মে কত-না শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন নারীকে যেতে হয়। একেক ধাপে হরমোনের পরিবর্তন হয় একেকভাবে। কখনো হরমোন বাড়ে, তো কখনো কমে। আর এসব হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই ভালো লাগা-মন্দ লাগার অনুভূতিগুলো হয়ে পড়ে অস্থিতিশীল। এমনটাই জানালেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।
সময়ের সঙ্গে বদলায় কারণ
বয়ঃসন্ধির সময়ে, অর্থাৎ কৈশোরে হরমোনের হঠাৎ অদলবদল ঘটায় অল্পতেই মন খারাপ বা মেজাজ হারানোর মতো ঘটনা ঘটে বেশি। প্রতিবার মাসিক হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেও এ রকম সমস্যা হতে দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সমস্যা কমে আসে। তবে গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মদানের পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত একজন মা আবেগীয় অস্থিতিশীলতায় ভুগতে পারেন। এই সময়ে অবশ্যই তাঁর বাড়তি যত্ন নিতে হবে।
আনুষঙ্গিক উপসর্গ
হুট করে কাউকে রেগে যেতে যেমন দেখা যায়, তেমনি সামান্য কারণেই খিলখিল হাসির ফোয়ারা ছোটাতেও দেখা যেতে পারে। হঠাৎই বিষণ্ন হয়ে পড়া কিংবা মনমেজাজ এলোমেলো হওয়ার পাশাপাশি থাকে অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপসর্গও। মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন কেউ কেউ। কারও কারও খাবার রুচি কমে যায়। মনোযোগের অভাব কিংবা কাজে অনীহাও দেখা দেয়। ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। শারীরিক অস্বস্তিও থাকতে পারে।
মেনোপজের সময়
মাসিক একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার (মেনোপজ) সময় কিন্তু আবারও ঘটে হরমোনের তারতম্য। মেনোপজ হওয়ার আগে থেকেই এর প্রভাব শুরু হয়ে যেতে পারে, ভোগাতে পারে পরবর্তী বহু বছর। এই সময়ে মনমেজাজের হঠাৎ রদবদল তো বটেই, আরও নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে গরম লেগে উঠতে পারে, সঙ্গে ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বুক ধড়ফড় করতে পারে। কিছুক্ষণ পরই আবার ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। রাতে শরীর ঘেমে উঠতে পারে, হুটহাট ঘুম ভেঙে যেতে পারে। এই সময়ে মাথা গরম বোধ করা, মাথা থেকে ভাপ বের হওয়ার মতো অনুভূতি, শরীর জ্বালা কিংবা অল্পবিস্তর স্মৃতিভ্রমের মতো সমস্যাও দেখা দেয়। বয়সের সঙ্গে যেমন প্রাকৃতিক কারণেই এসব সমস্যা দেখা দেয়, তেমনি আবার যাঁদের কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য জরায়ু, ডিম্বাশয়, ডিম্বথলি—সবটাই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়সের আগেই এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নারীর প্রতি সহনশীল হোন
হুট করে যেকোনো বয়সী কোনো নারীর আচরণে খানিকটা অসংগতি লক্ষ করলে তাঁকে ভুল বুঝবেন না। যদি কারও মধ্যে ক্রমাগত এমন অসংগতি লক্ষ করেন, তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। তিনি কোনো মানসিক চাপে আছেন কি না, বুঝতে চেষ্টা করুন। অন্য কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা তাঁর মধ্যে আছে কি না, সেটিও বুঝতে চেষ্টা করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নিয়মে হরমোনের তারতম্যের ফলে মনমেজাজের রদবদল হলেও কিছু মানসিক রোগেও এ রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।