সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। তবে সবার ঘুম কি স্বাভাবিক? চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, ঘুমের মাঝেও থাকতে পারে অস্বাভাবিকতা। আর ঘুমের অস্বাভাবিকতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
ঘুমের নানা সমস্যার মধ্যে অন্যতম—সহজে ঘুম না আসা, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুমানোর পরও মনে হওয়া পূর্ণ ঘুম হয়নি। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়াও একটা সমস্যা। অনেকেই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন, যা ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটার কারণে হয়। অনেকে ঘুমের মাঝে দাঁত ঘষা কিংবা অস্বাভাবিকভাবে পা নাড়ানোর মতো সমস্যাতেও ভোগেন। কেউ ঘুমের মধ্যে হাঁটেন, কেউ শোয়া অবস্থাতেই অতিরিক্ত নড়াচড়া করেন। কেউ আবার স্বপ্নে যা করছেন, বাস্তবেও অবচেতনে সেভাবেই হাত-পা নাড়াতে থাকেন। ঘুমের এমন নানা অস্বাভাবিকতার জন্য ‘পলিসমনোগ্রাফি’ নামক পরীক্ষার (সাধারণভাবে ‘স্লিপ স্টাডি’ বলা হয়) প্রয়োজন হতে পারে।
এ পরীক্ষার মাধ্যমে ঘুমের সময় মস্তিষ্কের ভেতরকার পরিবর্তন (ওয়েভ বা তরঙ্গ), হৃৎপিণ্ডের গতি, শ্বাসপ্রশ্বাস, চোখের গতিশীলতা, পায়ের নড়াচড়া—এসব রেকর্ড করা হতে থাকে। রোগী নাক ডাকছে কি না, বোঝার জন্য ওই ঘরের শব্দও রেকর্ড করা হয়। রোগীর ঘুমের যেকোনো অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের জন্য এমনকি ভিডিও–ও করে রাখা হয়।
নির্দিষ্ট ঘরে রোগী ঘুমাবেন আর রোগীর শরীরে লাগানো বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সব বিষয় রেকর্ড হতে থাকবে। রোগী তাঁর স্বাভাবিক ঘুমের সময়েই এই ঘরে ঘুমাতে যাবেন এবং উঠবেন, আর এই সময়টুকুতে তাঁর ঘুমের সামগ্রিক বিষয়াদি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
যেদিন পরীক্ষাটি করা হবে, সেদিন ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। অবশ্যই চা, কফি ও অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজ দিনের বেলায় হালকা ঘুমের অভ্যাস থাকলেও সেদিন ঘুম এড়িয়ে যেতে বলা হয় রোগীকে। পরীক্ষাটি করতে হলে সারা রাতের জন্য চলে আসতে হয় হাসপাতালে। ঘুমের আগে বই পড়া বা অডিও ক্লিপ শোনার মতো নির্দিষ্ট কোনো অভ্যাস থাকলে সেটির জন্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ নিয়ে আসতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে একাধিক রাতেও করানো লাগতে পারে এই পরীক্ষা। দিনে অতিরিক্ত ঘুমান, এমন রোগীর ক্ষেত্রে কখনো কখনো রাতের পর দিনেও আবার একইভাবে পরীক্ষা করাতে হতে পারে।